Home » সোস‍্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ‍্যে চলছে দেহ ব‍্যাবসা। হয়রান সাধারণ মানুষ। প্রশাসন নির্বিকার !!

সোস‍্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ‍্যে চলছে দেহ ব‍্যাবসা। হয়রান সাধারণ মানুষ। প্রশাসন নির্বিকার !!

পর্ণা চ্যাটার্জী, কলকাতাঃ মুঠো ফোন আজকাল সোনাগাছির থেকে কোনও অংশে পিছিয়ে নেই। সোনাগাছি নামটার সাথে পরিচিত সকল মানুষ। নিষিদ্ধ অঞ্চল বা রেড লাইট এরিয়া বলতে বাঙালির এই নামটাই প্রথম মাথায় আছে। শহরে বা অন্য কোনও অঞ্চলে রেড লাইট এরিয়া ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এবং ছিলও কিন্তু সোনাগাছি নামটাই অধিক প্রচলিত। কিন্তু এখন কি সোনাগাছি যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে? ফোন খুললেই তো একাধিক ভিডিও চোখের সামনে চলে আসে। ফেসবুক ইনস্টাগ্রাম তো খোলাই দায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে এক শ্রেণীর মানুষের কাছে।

সোস‍্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ‍্যে চলছে দেহ ব‍্যাবসা। হয়রান সাধারণ মানুষ। প্রশাসন নির্বিকার !!

আজকের দিনে সামাজিক মাধ্যম শুধুমাত্র অবসর যাপনের সামগ্রী নয়, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম বা হোয়াটস অ্যাপ প্রয়োজনীয় মাধ্যম হয়ে উঠেছে। এই প্লাটফর্ম গুলি ব্যবহার করে হচ্ছে নানা রকম কাজ, ব্যবসা, কেউ বা নিজের শখ পূরণের জন্য বেছে নিয়েছেন এই মাধ্যমগুলি। ফেসবুক ও পরিবর্তে সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে। ভিডিও দেখার, শেয়ার করার ওপর মানুষ টাকা উপার্জনও করতে পারছে। কিন্তু বর্তমানে এই প্লাটফর্ম গুলিকে ব্যবহার করে চলছে নোংরামি। এক শ্রেণীর মানুষ বিশেষত মহিলারা শরীর প্রদর্শনের খেলায় নেমেছে, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম ভাবে অশ্লীল কথাবার্তার সাথে শরীর প্রদর্শনের ভিডিও পোস্ট করে চলেছে সামাজিক মাধ্যমে। কোন রকম সার্চ ইঞ্জিন ছাড়াই ভিডিও গুলি চলে আসছে মানুষের টাইমলাইনে। যার ফলে অস্বস্তিতে পড়ছে এক শ্রেণীর মানুষ।

এক শ্রেণীর মানুষ বিষয়টাতে যেমন বিরক্ত ফেসবুক খোলা দায় মনে করছে। আবার আর এক শ্রেণীর মানুষ এই ভিডিও গুলো দেখে নিশ্চয়ই মজা পাচ্ছে। নাহলে এই সমস্ত ভিডিওতে এত ভিউ হচ্ছে কোথা থেকে? কিশোরী থেকে মধ্য বয়স্ক কোনও শ্রেণীর মহিলাই বাদ নেই সকলেই আছে এই শরীর প্রদর্শনীর খেলায়। স্নান করার ভিডিও, শরীরের বিভিন্ন জায়গার পশম কামানোর ভিডিও, অন্তর্বাস পড়ে ঘরের কাজ করার ভিডিও, বা ওই সমস্ত পোশাক পড়ে খাওয়ার এবং ভিউয়ারদের খাইয়ে দেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করার ভিডিও সবই ঘুরে বেড়াচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। কিছু দিন ধরে তো আবার কিছু মহিলার মুখ বাদ দিয়ে নগ্নতার বিভিন্ন রকম ভিডিও ঘুরে বেড়াচ্ছে। মুখ দেখা যাচ্ছে না বা কোথাও মুখটা ব্লার করা কিন্তু বাকি শরীর উন্মুক্ত এমন দৃশ্যও দেখা যাচ্ছে।

মোবাইল এখন বাচ্ছাদের হাতেও সবসময় রয়েছে। এগুলো দেখে কি শিখবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তো এটা জেনেই বড় হচ্ছে যে শরীর প্রদর্শন করার থেকে ভালো টাকা উপার্জনের সহজ পথ আর নেই। আজকের যুবসমাজের পাশাপাশি মধ্যবয়স্ক, বয়স্ক সকল বয়সী মানুষ সামাজিক মাধ্যম দেখে – তাদের অস্বস্তির জায়গাটা কি বুঝতে পারছে না কেউ? ইনস্টাগ্রাম মানেই তো শরীর প্রদর্শনের জায়গা, এই কথা ভাবা হচ্ছিল আজ প্রায় কয়েক বছর ধরে, এখন সেই জায়গায় তাল মিলিয়ে চলেছে ফেসবুক।

সোস‍্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ‍্যে চলছে দেহ ব‍্যাবসা। হয়রান সাধারণ মানুষ। প্রশাসন নির্বিকার !!


ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তো ভায়োলেন্স ঠেকাতে খুব তৎপর। লেখার মধ্যে কোন হিংসাত্মক, আক্রমণাত্মক, নোংরা কোনও শব্দ ব্যবহার করলে সেই সমস্ত প্রোফাইল লক হয়ে যায় কিছু দিনের জন্য এটাই নিয়ম ফেসবুকের। যা কিছু ক্ষতিকর তাই রুখতে তৎপর ফেসবুক। তাহলে এগুলো কি সমাজের কাছে ক্ষতিকর নয়? সমাজের কাছে ভালো কল্যাণীয় বার্তা দিচ্ছে এই ভিডিও গুলি? এগুলো নিয়ে কেন নীরব ফেসবুক কর্তৃপক্ষ? শুধু ফেসবুক কর্তৃপক্ষ কেন প্রশাসন? তারা কি মনে করে না এগুলো বন্ধ হওয়া প্রয়োজন? কেন্দ্রীয় সরকার তো হিন্দুত্ববাদ ছড়িয়ে দিতে খুব তৎপর, বিরিয়ানি খেলে হিন্দু নয়, ছোট পোশাক পড়লে হিন্দু নয়, তাহলে এগুলো কোন হিন্দুত্ববাদের নমুনা? রাজ্য সরকার হোক বা কেন্দ্রীয় সরকার তারা কি মনে করেন না যে এই দৃশ্য দূষণ এই মানসিকতার দূষণ বন্ধ হওয়া প্রয়োজন? ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে কী বার্তা দিচ্ছে তারা? সমাজের এই দূষণ দূর করার দায়িত্ব তবে কাদের? আজকের দিন হোক বা ভবিষ্যৎ মানুষকে এই অস্বস্তি থেকে মুক্ত করবে কে?

এ নিয়ে কি বলছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী শ্রীমতী মিতা বন্দোপাধ‍্যায়।

শরীর প্রদর্শন ন্যায় না অন্যায় সে বিষয়ে কথা বলা একদমই উচিত নয়। সেটা একটা মানুষের ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমরা প্রত্যেক মানুষই কিছু না কিছু বিক্রি করে পয়সা উপার্জন করি। কেউ শ্রম বিক্রি করে তো কেউ মেধা কেউ বা প্রতিভা। সেক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে কেউ যদি শরীর বিক্রি করতে চায় সেটা তার ব্যক্তি স্বাধীনতা। পর্ণগ্রাফি চলে আসছে যুগ যুগান্ত ধরে সেটা অন্যায় নাহলে এটাও অন্যায় নয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে প্লাটফর্ম, সমস্যা হচ্ছে মাধ্যম। এখন যদি বিনোদন চ্যানেলে পড়াশোনা করানো হয়, বা ঠাকুরের চ্যানেলে র‍্যাপ গান শোনানো হয় সেটা তো দর্শকদের কাছে পীড়াদায়ক হবেই। এই সমস্ত ভিডিও প্রদর্শনের জন্যও তো মাধ্যম রয়েছে, সেখানে গিয়ে এসব ভিডিও আপলোড করা হোক। আর যারা সেই ভিডিও দেখতে উৎসাহী তারা সেখানে গিয়ে দেখুক। যারা দেখতে চায় না বা পছন্দ করছেন না তাদের জোড় করে দেখানোটা রীতিমত অপরাধ। এই ভিডিও করা মহিলাটার বাচ্ছাটাও তো ফেসবুক করে, সে কি অন্যদের বলবে যে ‘আমার মা স্নান করা দেখিয়ে পয়সা পাচ্ছে?’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Click to Go Up
error: Content is protected !!