পর্ণা চ্যাটার্জী, কলকাতাঃ ডাক্তার কাদম্বিনী গাঙ্গুলী দেশের প্রথম মহিলা প্র্যাক্টিসিং ডাক্তার। ইতিহাসের একজন ভুলে যাওয়া মানুষ। বাংলার জন্য তথা দেশের জন্য তিনি এবং তার স্বামী দ্বারকানাথ গাঙ্গুলীর অবদান যে ঠিক কতটা তা হয়তো জানে না বাংলার মানুষ। না ভুল বলা হল জানত না মানুষ। এখন এদের ব্যাপারে অনেকেই অনেকটা জানেন। তার জন্য দায়ী অবশ্য বাংলার দুই বিনোদন চ্যানেল। দুই চ্যানেল নিজেদের মধ্যে রেষারেষির কারণে তাকে নিয়ে ধারাবাহিক তৈরি করল দুই চ্যানেলই। তাতে আর যাই হোক এমন দুই মহান মানুষকে কিছুটা হলেও চিনতে পেরেছে মানুষ। তাই কিছু সময় রাজায় রাজায় যুদ্ধ হলে উলুখাগড়ার প্রাণ না গিয়ে লাভবান হন উলুখাগড়ারা।
কাদম্বিনী গাঙ্গুলী বাংলা মেয়েদের মধ্যে অনেক কিছুতেই প্রথম তিনি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা এন্ট্রান্স পরীক্ষার্থী, প্রথম মহিলা গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে একজন, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের প্রথম মহিলা ছাত্রী, পশ্চিমী চিকিৎসার প্রথম মহিলা প্র্যাক্টিসিং ডাক্তার, জাতীয় কংগ্রেসের মঞ্চে উঠে ধন্যবাদ জানানো প্রথম মহিলা আরও কত কী? ব্যক্তিগত জীবনেও অনেকাংশে প্রথম তিনি, প্রথম অসবর্ণ বিবাহ, মহিলা হয়ে প্রথম বার বিবাহের প্রস্তাব দেওয়া, বাংলার প্রচলিত প্রথম প্রেম ঘটিত বিবাহ। তাই প্রথমা শব্দটি তার জন্যই তৈরি। আজ থেকে প্রায় ২০০ বছর আগে আজকের নারীর প্রতিনিধি ডাক্তার কাদম্বিনী গাঙ্গুলী। আজ বাংলার মেয়েদের এগিয়ে আসার জন্মদিন, সমাজের সামনের সারিতে দাঁড়ানোর জন্মদিন, নারীর ক্ষমতায়নের জন্মদিন আজ ডাক্তার গাঙ্গুলীর জন্মদিন।
কাদম্বিনী গাঙ্গুলীকে নিয়ে কথা হলে দ্বারকানাথ গাঙ্গুলীর নাম আসবে তা হয়না। তিনি না থাকলে কাদম্বিনী গাঙ্গুলী ডাক্তার গাঙ্গুলী হতে পারতেন না। না তাদের কাজকর্ম নিয়ে কিছু বলার দরকার হবেনা। চ্যানেলের রেষারেষির জন্য সবটাই মানুষ জেনে গেছেন। যেহেতু এগিয়ে থাকার লড়াই ছিল দুই চ্যানেলের মধ্যে তাই সত্যতা দেখাতেই সচেষ্ট ছিল তারা। সত্যতা দেখাতে পেরে এক চ্যানেল এগিয়ে যায় এবং আর এক চ্যানেল মাঝপথে বন্ধ করে দেয় সিরিয়ালটি। বেশিরভাগ সত্যি ঘটনাই দেখানো হয়েছে সিরিয়ালটিতে। এই দুই ব্যক্তিত্বকে নিয়ে যথেষ্ট পড়াশোনা করেই বলছি দু একটা ঘটনা ছাড়া তাদের জীবনের বড় বড় কর্মকাণ্ডগুলি দেখিয়েছে চ্যানেল।
আজকের সমাজে নারী যেখানে দাঁড়িয়ে আছে তা বোধহয় তার হাত ধরেই শুরু হয়েছে। ১৫০ বছর আগে এক মহিলা এতটা লড়াই এতটা কষ্ট না করলে আজকের মেয়েদেরও হয়তো ঘরে বসেই পচতে হত। সেই দিক থেকে তিনি প্রথম সারির যোদ্ধা। নিজে ক্ষতবিক্ষত হয়ে পরের সারির নারীদের আগলে রেখেছেন পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। মানুষ তাকে মনে রাখুক না রাখুক ইতিহাস তাকে ভুলে যাক তার তৈরি ভীত টা ছিল বলেই এতবড় অট্টালিকা দাঁড়াতে পেরেছে আজ এটা মনে রাখতেই হবে।