সামনেই পুজো, ঢাকে কাঠি পড়তে খুব বেশী দেরী নেই। শহর থেকে গ্রামগঞ্জের মন্ডপ গুলিতে এখন চরম ব্যাস্ততা। অন্যদিকে আরো ব্যাস্ত অভিজাত উত্তর কলকাতার বিখ্যাত পটুয়াপাড়া কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীরা। কিন্তু এসব কিছুর সাথে সাথেই এদের থেকেও বেশী ব্যাস্ত শখের ফটোগ্রাফার ও উঠতি মডেলরা।
দিন বদলেছে। তাই শারদীয় উৎসবের প্রতিটি আমেজ মানুষ চায় সব রকম ভাবেই উপভোগ করতে। করোনা কালের পর থেকেই বেশীর ভাগ মানুষ সামাজিক মাধ্যমে নানান ধরনের ভ্লগিং ভিডিও, রিলস্ ইত্যাদি শেয়ার করে অর্থ উপার্জনের সাথে সাথে হতে পেথে চান খ্যাতি।
বিশ্বকর্মা পুজো কাটতে না কাটতেই ভীড় বাড়তে শুরু করে অভিজাত উত্তর কলকাতার শোভাবাজারের বিখ্যাত পটুয়াপাড়া কুমোরটুলিতে। এখানে ক্রমশ ভীড় করতে থাকেন শখের ফটোগ্রাফার আর উঠতি মহিলা মডেলরা। কুমোরটুলিতে এই সময় ফটোগ্রাফার দের যাতায়াত নতুন কিছু নয়। করোনা কালের আগে অবধি এখানে যারা প্রকৃত ফটোগ্রাফী চর্চা করেন তারাই বেশী যেতেন তাদের চিত্রশিল্পের মাধ্যমে মৃৎশিল্পী ও তার শিল্পকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরার জন্য। সে সব ছবি যেত দেশ বিদেশের নামীদামি প্রদর্শনীতে। কিন্তু এখন বেশীর ভাগ কমবয়সী ভ্লগার আর উঠতি মডেলদের ভীড়। যারা প্রকৃত ফটোগ্রাফি চর্চার খাতিরে যেতেন তারা ভীষনরকম দায়িত্বের সাথে কুমোরটুলির ঐ সংকীর্ন গলির মধ্যে মৃৎশিল্পীদের বিরক্ত না করে এবং প্রতিমা গুলির যাতে কোন ক্ষতি না হয় সে সব বুঝেই ফটোগ্রাফি করতেন। কিন্তু এখন নতুন শখের ফটোগ্রাফার আর মডেলরা একেবারেই দায়িত্বহীন ভাবে প্রবেশ করছেন।
অভিজাত কলকাতার কুমোরটুলি এলাকার অভিজাত মননশীল পরিবেশে উঠতি মডেলরা স্বল্প পোষাকে যেখানে খুশি যেমন খুশি ফটোশুট করছেন যা সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে কুমোরটুলির আভিজাত্যে আঘাত নামিয়ে আনছে। শোনাযাচ্ছে এদের মধ্যে অনেকেই প্রকৃতস্থ অবস্থাতেও থাকেন না। অনেক সময় তারা মৃৎশিল্পীদের অনুমতি ছাড়াই ঢুকে পড়ছেন তাদের সংকীর্ন গ্যালারির মধ্যে ফলত অনেক সময়েই ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রতিমার বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ। মৃৎশিল্পীদের অনুরোধ তারা গ্রাহ্য করছেন না বরং তর্কাতর্কি করে পরিবেশ অশান্তিকর করে তুলছেন।
নতুন শখের ফটোগ্রাফার মডেল বা ভ্লগাররা নিজেদের স্বার্থ ছাড়া একবারও মৃৎশিল্পীদের ক্ষতির কথা ভাবেন না। এবং এই শ্রেনীর মানুষের ভীড় বাড়তেই থাকে মৃন্ময়ীর রুপদান শেষ করা অবধি।
এই অযাচিত ভীড় নিয়ন্ত্রণ করতে কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীদের সমবায় সমিতি থেকে সব ফটোগ্রাফারদের জন্য একটি বিশেষ মূল্য ধার্য করেছেন বেশ কিছু বছর। যা সব ফটোগ্রাফার রাই সেই অনুদান এক কালীন দিয়ে থাকেন কিন্তু সামান্য ১০০ টাকা এই সব শ্রেনীর মানুষদের কাছে কিছুই না। ফলত অনুদান দিয়েই তারাও অধিকার ফলাতে শুরু করছেন যা ক্রমশ নিয়ন্ত্রনের বাইরে। বিরক্ত কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীদের পাশাপাশি স্থানীয় অনান্য দোকানদার বা ব্যাবসায়ীরাও।
তাদের মতে সব থেকে বেশী ভীড় হয় মহালয়ার দিন। এদিন থেকেই মাতৃ প্রতিমা মন্ডপে পাঠানো শুরু হয়েযায়। কিন্তু এই সব শখের ফটোগ্রাফার আর মডেল ভ্লগারদের ভীড়ে প্রতিমা গ্যালারি থেকে বের করে গাড়ীতে তোলার মধ্যেই ঘটে নানান দূর্ঘটনা। ক্ষতি হয় প্রতিমার। যা পরে ঠিক করা গেলেও আগের মতো সুন্দর থাকে না।
তাই এ বছর কুমোরটুলি মৃৎশিল্পী সমবায় সমিতি থেকে ঘোষনা করা হচ্ছে শুধুমাত্র মহালয়ার দিন কুমোরটুলিতে ফটোগ্রাফার ও মডেলদের প্রবেশ কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ। তাদের সাথে ঐ দিন থাকবেন স্থানীয় প্রশাসনিক ব্যাক্তি ও কলকাতা পুলিশের বিশেষ একটি বিভাগ।
সব মিলিয়ে কেমন আছে কুমোরটুলি? কি বলছেন মৃৎশিল্পীরা? দেখুন এই ভিডিও তে।