Home » অপ্রতিরোধ্য রক্ষক

অপ্রতিরোধ্য রক্ষক

বহতা নদী সরকার

বিপত্তারিণী হলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, আসাম ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে পূজিতা হিন্দু দেবী। তিনি সঙ্কটনাশিনী এবং দেবী দুর্গা (পার্বতী) -এর ১০৮ অবতারের অন্যতম। যিনি দুর্গা তিনিই বিপত্তারিণী। মা বিপত্তারিণী পুরাণে কৌশিকীদেবী নামে খ্যাত।

অপ্রতিরোধ্য রক্ষক

পুরাণ মতে শুম্ভ ও নিশুম্ভ নামক দুই অসুরের হাতে দেবতারা পরাজিত হয়ে হিমালয়ে গিয়ে মহামায়ার স্তব করতে লাগলেন। সেই সময় পরমেশ্বরী ভগবতী পার্বতী সেই স্থান দিয়ে যাচ্ছিলেন। দেবী তাদের স্তব শুনে বললেন, “আপনারা এখানে কার স্তব করছেন?” সে সময় ভগবতী পার্বতীর শরীর থেকে তাঁর মতো দেখতে আর একজন দেবী বের হয়ে আসলেন। সেই নব আবির্ভূতা দেবী জানালেন, এরা আমারই স্তব করছেন।” এই দেবী যুদ্ধে শুম্ভ ও নিশুম্ভ নামক অসুরের বধ করেছিলেন।

অপ্রতিরোধ্য রক্ষক

আর একটি পৌরাণিক গাথানুসারে ভগবান মহাদেব রহস্যচ্ছলে দেবী পার্বতীকে ‘কালী’ বলে উপহাস করেন। এতে দেবী ক্রুদ্ধ হয়ে তপস্যার মাধ্যমে নিজের “কৃষ্ণবর্ণা”রূপ পরিত্যাগ করলেন। সেই কৃষ্ণবর্ণা স্বরূপ দেবীই হলেন দেবীর পার্বতীর অঙ্গ থেকে সৃষ্ট জয়দুর্গা, কৌশিকীদেবী ও বিপত্তারিণী দুর্গা।

দেবী দুর্গার ১০৮ টি রূপের মধ্যে অন্যতম হলেন দেবী সংকটনাশিনী। ধর্ম বিশ্বাস অনুযায়ী দেবী বিপত্তারিণী নিজের ভক্তদের সকল বিপদ থেকে রক্ষা করেন।

অপ্রতিরোধ্য রক্ষক

আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের সোজা রথ ও উল্টো রথের মাঝখানে যে শনি ও মঙ্গলবার থাকে, তাতেই বিপত্তারিণী পুজো করা হয়। এই পুজোর সময় দেবী বিপত্তারিণীতে একটি লাল সুতো নিবেদন করতে হয়। শাস্ত্রমতে, এই পুজোয় ১৩ রকমের ফল, ১৩ ধরনের মিষ্টি ও ১৩ ধরনের ফুল নিবেদন করতে হয় দেবীকে। ১৩ ধরনের ফুলের মধ্যে লাল জবা ও পদ্মফুল অবশ্যই রাখতে হয় কারণ এই দুটি মায়ের প্রিয় ফুল। অর্পিত ভোগ পরবর্তীতে প্রসাদ হিসেবে বিলি করতে হয়। আবার যাঁরা এই উপবাস করেন তাদের ১৩ টি লুচি ও ১৩ ধরনের ফল খেয়ে ব্রত ভঙ্গ করাতে হয়।

অপ্রতিরোধ্য রক্ষক

বিপত্তারিণী পুজো সাধারণত চার দিন ধরে পালিত হয়। পুজোর নিয়ম অনুযায়ী প্রথম দিনে দেবীর আরাধনা করা হয়। এরপর দু-রাত ধরে চলে লোকগান, কীর্তন, ভজন। চতুর্থ দিনে পূজাপাঠ করে নিরঞ্জন করা হয়। প্রথা অনুযায়ী এই পুজোর পর হাতে লাল তাগা পরিধান করার নিয়ম রয়েছে। লাল সুতোয় বাধা দূর্বাঘাসের তাগা পরেন মহিলা ও পুরুষরা। সাধারণত নিয়ম মেনে পুরুষরা ডান হাতে এবং মহিলারা বাম হাতে এই পবিত্র তাগা পরেন। কমপক্ষে এই ব্রত টানা তিন বছর পালন করার নিয়ম রয়েছে।

অপ্রতিরোধ্য রক্ষক

বিপত্তারিণী পুজো ও ব্রত পাঠ করলে বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। তার মধ্যে অন্যতম হল, এই দিনে পুজোর আগের দিন থেকে নিরামিষ ভোজন করতে হয়। এছাড়া বাঙালি নিয়ম মেনে বাঙালি মহিলারা শাখা, সিঁদুর, আলতা পড়ে অর্থাৎ স্নান সেরে সেজেগুজে এই পুজো করতে হয়।

বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। আর এই পার্বণগুলো বাঙালি জীবনে মিলেমিশে একীভূত হয়ে গিয়েছে রঙবাহারি রূপে। বাঙালির জীবনে পালনীয় সেরকমই একটি অনুষ্ঠান হলো বিপত্তারিণী পূজা। ভক্তরা মনে করে থাকেন যে, বিপত্তারিণী মায়ের পাদপদ্মে আশ্রয় নিলেই মা তাদের সকল বিপদ দূর করে দেবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Click to Go Up
error: Content is protected !!