বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরে ফের হামলার ঘটনা ঘটেছে। ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, রাত ৮টা ৪০ মিনিটে ‘বিপ্লবী ছাত্র’দের নেতৃত্বে বিক্ষোভকারীরা ভেঙে ফেলে ঐতিহাসিক স্মৃতি জাদুঘরের প্রধান গেট এবং এরপর শুরু করে ব্যাপক ভাঙচুর। হামলাকারীরা বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে এবং তিনতলা ভবনের বিভিন্ন অংশে আগুন ধরিয়ে দেয়।
এছাড়া, হামলার পরের কিছু সময়েই তিনতলা ভবনটি আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়ে যায়, যা দেখার পর এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। এটি একটি চরম দুঃখজনক ঘটনা, কারণ এই ভবনটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি জাতির শ্রদ্ধা নিবেদনের একটি প্রতীক এবং বাংলাদেশ স্বাধীনতার ইতিহাসের অংশ।
![](https://theindianchronicles.com/wp-content/uploads/2025/02/j1-1024x576.avif)
কী ঘটেছিল ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে?
সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের” আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এক ফেসবুক পোস্টে বলেছিলেন, “আজ রাতে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের তীর্থভূমি মুক্ত হবে।” তার কিছুক্ষণ পরই, বিপ্লবী ছাত্রদের দল হামলার পরিকল্পনা নেয়। ওই রাতে রাত ৮টা ৪০ মিনিটে, তাঁরা জাদুঘরের বাইরের ফটক ভেঙে প্রবেশ করে ভাঙচুর চালাতে শুরু করে। দ্রুতই আগুনের শিখা দেখা যায়, যা ভবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশের ক্ষতি করে।
১৯৭৫ সালের আগস্টের স্মৃতি
এ ঘটনা আরও অশান্তি এবং শোকের সাথে মিলিত হয়, কারণ এই বাড়িতেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট গভীর রাতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি গ্রুপ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারের সদস্যদের নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল। বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী, তিন ছেলে, এবং দুই পুত্রবধূ হত্যার শিকার হন। তবে, তার দুই কন্যা হাসিনা ও রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।
![](https://theindianchronicles.com/wp-content/uploads/2025/02/j3.jpg)
হামলার উদ্দেশ্য কি?
এ বিষয়ে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, হামলার পেছনে ছিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বিভিন্ন প্রতিবাদ এবং আন্দোলন। ফেসবুকে শরিফ ওসমান হাদি নামক এক ব্যক্তি ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক হিসেবে মুজিবের বাড়ি ভেঙে ফেলার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। তাঁর এই পোস্টের পরই আন্দোলন আরও তীব্র হয়ে ওঠে। এটি দেশের রাজনৈতিক উত্তেজনার একটি জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
হামলার পরবর্তী পরিস্থিতি
হামলার পর, ধানমন্ডি এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয় এবং পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। ইতিমধ্যে, জাতীয় নেতৃবৃন্দ এবং সাধারণ মানুষ এই হামলার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। জাতির পিতার স্মৃতিবিজরিত এই বাড়ির ক্ষতিপূরণ প্রার্থনা করছে দেশবাসী।
![](https://theindianchronicles.com/wp-content/uploads/2025/02/j2-1024x576.webp)
কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে?
প্রশাসন ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের হামলা বন্ধ করতে শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। জনগণের কাছে আহ্বান জানানো হচ্ছে, জাতির পিতার স্মৃতিকে রক্ষা করতে সবাই ঐক্যবদ্ধ হোক।
এ ধরনের ঘটনা দেশের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক এবং জাতির জন্য একটি বড় বিপর্যয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই স্মৃতি জাদুঘর বাংলাদেশের ইতিহাসের অমূল্য অংশ। আশা করা যায়, প্রশাসন এবং জনগণ মিলে এই ঘটনাকে সামাল দিতে সক্ষম হবে এবং ভবিষ্যতে এমন হামলা রোধ করতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।