পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলার পানাগড়ে এক মর্মান্তিক ঘটনায় ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কর্মী সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এটি সড়ক দুর্ঘটনা মনে হলেও, পরবর্তী তথ্য ও সাক্ষ্যপ্রমাণে বিষয়টি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।

ঘটনার বিবরণ
রবিবার গভীর রাতে হুগলির চন্দননগর থেকে সুতন্দ্রা ও তাঁর সহকর্মীরা একটি ছোট গাড়িতে গয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। বুদবুদ এলাকায় একটি পেট্রোল পাম্পে তেল ভরানোর সময়, মদ্যপ অবস্থায় থাকা একদল যুবক সুতন্দ্রাকে উত্যক্ত করতে শুরু করে। তারা সাদা রঙের একটি গাড়িতে করে সুতন্দ্রাদের গাড়িকে ধাওয়া করে এবং কটূক্তি ও অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করতে থাকে। পানাগড় বাজারের রাইসমিল রোডের মুখে তাদের গাড়ি আটকানোর চেষ্টা করলে, ভয়ে সুতন্দ্রাদের গাড়ির চালক দ্রুতগতিতে রাইসমিল রোডে প্রবেশ করেন। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়িটি প্রথমে একটি দোকানে, তারপর রাস্তার ধারে শৌচাগারে ধাক্কা মেরে উল্টে যায়। ঘটনাস্থলেই সুতন্দ্রার মৃত্যু হয়, এবং বাকি চারজন সামান্য আহত হন।

পুলিশের বক্তব্য
কাঁকসা থানার পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুটি গাড়ি আটক করেছে এবং মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মহকুমা হাসপাতালে পাঠিয়েছে। অভিযুক্ত যুবকদের শনাক্ত করতে পুলিশ আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখছে। তবে এখনও পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি।

সহযাত্রী ও চালকের বক্তব্য
সহযাত্রী মিন্টু মণ্ডল জানিয়েছেন, “গাড়িটাকে ফলো করছিল। নোংরা অঙ্গভঙ্গি, কটুক্তি করছিল। হঠাৎ ওদের গাড়িটা সামনে চলে যায়। তারপর আমাদের গাড়িতে ধাক্কা মারে। গাড়িটা উল্টে যায়।” গাড়ির চালক রাজদেও শর্মা বলেন, “ওরা খালি ওভারটেক করার চেষ্টা করছিল। বাদিকে পুরো চেপে দিয়েছিল। গাড়িটাকে ডিভাইডারে তুলে দেওয়ার চেষ্টাও করেছিল, কিন্তু পারেনি। আমি থানার রাস্তা ধরি, তাও ওরা বাদিক থেকে এসে ফের ধাক্কা মারে, গাড়ি উল্টে যাওয়ায় ম্যাডামের ওখানেই মৃত্যু হয়।”

সুতন্দ্রার মায়ের প্রতিক্রিয়া
সুতন্দ্রার মায়ের বক্তব্য সম্পর্কে সরাসরি কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে, এমন মর্মান্তিক ঘটনায় পরিবারের শোক ও বিচারের দাবি স্বাভাবিক।
নারী নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন
এই ঘটনা রাজ্যে নারী নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। রাতের বেলায় মহিলাদের সড়কে নিরাপত্তা এবং পুলিশের তৎপরতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ।
উপসংহার
সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুর ঘটনায় সঠিক বিচার ও দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে পুলিশ তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। এই ঘটনা আমাদের সমাজে নারী নিরাপত্তা ও সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে আরও সচেতন হওয়ার প্রয়োজনীয়তা স্মরণ করিয়ে দেয়।