কলকাতা, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫:
তৃণমূল কংগ্রেস আজ কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে রাজ্য কর্মী সম্মেলনের আয়োজন করে। সম্মেলনে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বার্তা দেন। তিনি মূলত ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন, সাংগঠনিক রদবদল, এবং বিরোধী শিবিরের বিরুদ্ধে দলের অবস্থান নিয়ে আলোচনা করেন।

২০২৬ বিধানসভা নির্বাচন: তৃণমূল একাই লড়বে
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেন, “তৃণমূল কংগ্রেস ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনে এককভাবে লড়বে।” তিনি বলেন, “আমরা ২০২১ সালে একা লড়েছিলাম, মানুষ আমাদের সমর্থন করেছে। এবারও সেই বিশ্বাসকে সম্বল করেই এগিয়ে যাবো।”
তিনি কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের সম্ভাবনা সরাসরি উড়িয়ে দিয়ে জানান, দলের অবস্থান স্পষ্ট—তৃণমূল কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গের একক শক্তি হিসেবেই লড়বে। অভিষেকের এই ঘোষণার পর রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে, কারণ এটি স্পষ্ট যে, লোকসভা নির্বাচনের পর কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের দূরত্ব আরও বেড়েছে।
বিজেপির বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি: ‘সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে রুখতে হবে’
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানান। তিনি অভিযোগ করেন, বিজেপি ভোটের সময় সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের চেষ্টা করে, যা বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে যায় না।
তিনি কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “বিজেপি যখন ধর্মের নামে রাজনীতি করবে, তখন আমরা উন্নয়নের নামে রাজনীতি করব। বাংলার মানুষ বিভাজনের রাজনীতি চায় না।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ করছে এবং রাজ্যের প্রকল্পগুলোর জন্য বরাদ্দ অর্থ আটকে রেখেছে।

সাংগঠনিক রদবদলের ইঙ্গিত: ‘দলের ভিত আরও মজবুত করতে হবে’
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট জানান, দলের সাংগঠনিক কাঠামোয় বড় পরিবর্তন আসতে চলেছে। তিনি বলেন, “যারা নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছেন, তাদের আরও দায়িত্ব দেওয়া হবে। যারা নিষ্ক্রিয়, তাদের জায়গা নেওয়ার জন্য নতুন কর্মীরা প্রস্তুত আছে।”
তৃণমূলের অভ্যন্তরে পরিবর্তন আনার এই বার্তা থেকে পরিষ্কার যে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই জেলা, ব্লক এবং বুথস্তরে বড়সড় রদবদল হতে পারে।

ভুয়ো ভোটারদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান
অভিষেক ভোটার তালিকা সম্পর্কে কর্মীদের সতর্ক থাকতে বলেন। তিনি জানান, “ভুয়ো ভোটার তালিকা বিজেপির চক্রান্তের অংশ। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে এবং প্রশাসনের সহযোগিতায় তা প্রতিরোধ করতে হবে।”
তিনি আরও জানান, দলের কর্মীদের দায়িত্ব হলো, প্রতিটি এলাকায় সঠিক ভোটারদের তালিকা তৈরি করা এবং বিরোধীদের অপচেষ্টাকে রুখে দেওয়া।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তা: ‘একসাথে লড়তে হবে’
সম্মেলনের প্রধান অতিথি ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “তৃণমূল কংগ্রেস জনগণের দল। আমাদের সংগ্রাম মানুষের অধিকারের জন্য। একসাথে লড়তে হবে, একসাথে জিততে হবে।”
তিনি তৃণমূল কর্মীদের কাছে অনুরোধ করেন, প্রতিটি বুথে শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তুলতে হবে এবং বিরোধীদের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।

সম্মেলনের মূল বার্তা: ঐক্যবদ্ধ তৃণমূল, শক্তিশালী সংগঠন
রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন স্তরের নেতা ও কর্মীরা এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যে তিনটি প্রধান বার্তা উঠে এসেছে—
- ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল একাই লড়বে, কোনো জোট নয়।
- বিজেপির বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।
- দলের সাংগঠনিক পরিবর্তন আসতে চলেছে, নিষ্ক্রিয়দের জায়গায় সক্রিয় কর্মীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
তৃণমূলের এই কর্মী সম্মেলন আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য একটি বড় পদক্ষেপ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কড়া বার্তা এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঐক্যের ডাক তৃণমূলের কর্মীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা তৈরি করেছে।
শেষ কথা
২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূল কংগ্রেস তাদের সংগঠনকে মজবুত করতে বদ্ধপরিকর। বিজেপির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান, কংগ্রেসের সঙ্গে জোটবিহীন লড়াই, এবং সাংগঠনিক পরিবর্তনের বার্তা—সব মিলিয়ে তৃণমূলের রাজ্য কর্মী সম্মেলন ছিল রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই সম্মেলন থেকে যা স্পষ্ট, তা হলো—তৃণমূল কংগ্রেস লড়াইয়ের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত, এবং তারা একক শক্তি হিসেবেই বাংলার মাটিতে বিজেপিকে প্রতিহত করতে চায়।