গুরুগ্রাম, দিল্লি: ওড়িশার চলচ্চিত্র জগতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। গতকাল দিল্লীর গুরুগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে প্রয়াত হলেন ওড়িশার কিংবদন্তি অভিনেতা উত্তম মহান্তি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি লিভারের সিরোসিসসহ নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। প্রথমে ভুবনেশ্বরের একটি হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে দিল্লিতে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

উত্তম মহান্তির মৃত্যুতে শোকের ছায়া চলচ্চিত্র জগতে
উত্তম মহান্তির মৃত্যুতে ওড়িশার চলচ্চিত্র জগতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তাঁর সহকর্মী, অনুরাগী এবং পরিবার-পরিজন শোকে বিহ্বল। ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাঝি শোকপ্রকাশ করে বলেছেন,
“উত্তম মহান্তির মৃত্যু ওড়িশার সংস্কৃতি এবং চলচ্চিত্র জগতের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। তিনি আমাদের হৃদয়ে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তাঁর পরিবারকে আমি গভীর সমবেদনা জানাই।”
অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, যিনি উত্তম মহান্তির সঙ্গে বাংলা-ওড়িয়া একাধিক সিনেমায় কাজ করেছেন, শোকপ্রকাশ করে বলেন, – “উত্তমদার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা আমার কাছে অসাধারণ। তাঁর অভিনয়শৈলী এবং বিনয় আমাকে মুগ্ধ করেছিল। তাঁর চলে যাওয়া সত্যিই হৃদয়বিদারক।”

উত্তম মহান্তির বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার
উত্তম মহান্তি ওড়িশার অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা ছিলেন। ১৯৭৭ সালে সাধু মেহেরের পরিচালিত ‘অভিমান’ চলচ্চিত্র দিয়ে তাঁর অভিনয় জীবন শুরু হয়। এরপর তিনি একের পর এক ব্লকবাস্টার হিট ছবি উপহার দেন। তাঁর জনপ্রিয় চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য—
ডান্ডা বালুঙ্গা
কী জিতে কী হারে
অভিমান
চোর মাচায়ে শোর (হিন্দি)
উত্তম মহান্তি ওড়িয়া চলচ্চিত্র ছাড়াও প্রায় ৩০টি বাংলা সিনেমা এবং একাধিক হিন্দি সিনেমায় অভিনয় করেছেন।

পুরস্কার ও সম্মাননা
চার দশকেরও বেশি সময় ধরে চলচ্চিত্র দুনিয়ায় রাজত্ব করা উত্তম মহান্তি বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য—
১৯৯৯ সালে জয়দেব পুরস্কার
ওড়িশা স্টেট ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডস
২০১২ সালে ‘ওড়িশা লিভিং লেজেন্ড’ সম্মাননা
ব্যক্তিগত জীবন
উত্তম মহান্তির স্ত্রী অপরাজিতা মহান্তি নিজেও একজন জনপ্রিয় অভিনেত্রী। তাঁদের একমাত্র পুত্র বাবুসান মহান্তি বর্তমানে ওড়িশার সুপারস্টারদের মধ্যে একজন।
শেষকৃত্য ও শ্রদ্ধাঞ্জলি
উত্তম মহান্তির শেষকৃত্য তাঁর জন্মস্থান ওড়িশার কটকে সম্পন্ন হবে বলে জানা গেছে। পরিবার ও অনুরাগীদের জন্য এটি এক হৃদয়বিদারক মুহূর্ত। ওড়িশার পাশাপাশি বাংলা ও বলিউড চলচ্চিত্র জগতও এই কিংবদন্তির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে।
উত্তম মহান্তির মৃত্যুতে ওড়িশার চলচ্চিত্র জগতে এক অপূরণীয় শূন্যতা তৈরি হয়েছে, যা সহজে পূরণ হওয়ার নয়। তাঁর সিনেমাগুলো চিরকাল দর্শকদের হৃদয়ে অমর হয়ে থাকবে।