বিশ্বসাহিত্য ও সমাজতত্ত্বে অবিস্মরণীয় অবদান, বাঙালি অধ্যাপকের অনন্য স্বীকৃতি

বিশ্বখ্যাত সাহিত্য সমালোচক, অনুবাদক ও পোস্টকলোনিয়াল তাত্ত্বিক গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক ২০২৫ সালের হোলবার্গ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। নরওয়ে সরকার কর্তৃক প্রদত্ত এই সম্মাননা মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞানের নোবেল হিসেবে পরিচিত। তাঁর অনন্য গবেষণা, সাহিত্যতত্ত্ব ও সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের জন্য এই পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে।
কে এই গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক?
১৯৪২ সালে কলকাতায় জন্মগ্রহণকারী স্পিভাক প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে পড়াশোনা করেন এবং পরে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগের অধ্যাপক। তিনি মূলত উত্তর-ঔপনিবেশিক তত্ত্ব, অনুবাদ, রাজনৈতিক দর্শন ও নারীবাদী চিন্তাধারার এক গুরুত্বপূর্ণ চিন্তাবিদ হিসেবে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত।

হোলবার্গ পুরস্কার: কেন গুরুত্বপূর্ণ?
২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হোলবার্গ পুরস্কার মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান, আইন ও ধর্মতত্ত্বে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে প্রদান করা হয়। পুরস্কারের অর্থমূল্য প্রায় ৫৪০,০০০ মার্কিন ডলার (প্রায় ৬ কোটি টাকা)। এ পর্যন্ত বিশ্বের বহু খ্যাতনামা গবেষক, দার্শনিক ও সমাজতাত্ত্বিক এই সম্মাননা পেয়েছেন।
কেন তিনি পেলেন এই পুরস্কার?
হোলবার্গ কমিটির মতে, সাহিত্যতত্ত্ব, অনুবাদ, পোস্টকলোনিয়াল স্টাডিজ, রাজনৈতিক দর্শন এবং নারীবাদী তত্ত্বে তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য স্পিভাককে এই পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে। তাঁর “Can the Subaltern Speak?” প্রবন্ধটি বিশ্বজুড়ে আলোচিত ও সমাজবিজ্ঞানে বিপ্লব সৃষ্টি করেছে।

বাঙালির গর্ব, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শুভেচ্ছা
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইট করে গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাককে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি লেখেন—
“অধ্যাপক গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাককে আরও একটি শীর্ষ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের জন্য অভিনন্দন জানাই। মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞানে এই সর্বোচ্চ সম্মান আমাদের গর্বিত করেছে।”
I congratulate our Professor Gayatri Chakravorty Spivak on her attaining yet another top international recognition. She has been chosen this year for the Holberg Prize of Norway, which is considered to be a top prize in humanities and social sciences. She makes us proud by this…
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) March 17, 2025
বিশ্বজুড়ে সাড়া ফেলেছে এই স্বীকৃতি
স্পিভাকের এই স্বীকৃতি শুধুমাত্র তাঁর ব্যক্তিগত সম্মান নয়, বরং এটি বাংলা ভাষা, সাহিত্য এবং সমাজবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এক গৌরবময় অধ্যায়। গবেষক, অধ্যাপক এবং শিক্ষার্থীরা তাঁর কাজকে নতুনভাবে অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে দেখছেন।

উপসংহার
গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক শুধু একজন তাত্ত্বিক নন, তিনি সমাজের শোষিত-বঞ্চিত মানুষের পক্ষে কথা বলেছেন, ভাষা ও জ্ঞানের উপনিবেশবাদকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। তাঁর এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি শুধু বাঙালি সমাজ নয়, সমগ্র বিশ্ববুদ্ধিজীবীদের জন্য এক অনন্য অর্জন।