নয়াদিল্লি: ২৬/১১ মুম্বই হামলার মূল ষড়যন্ত্রী তহাওওর রানার সফল প্রত্যার্পণের পর ভারতের হাতে এসেছে এক বড় কূটনৈতিক জয়। এবার ভারতের লক্ষ্য—পলাতক আর্থিক প্রতারক মেহুল চোকসি-সহ একাধিক অভিযুক্তকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানাচ্ছে, কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে, এবং কিছু ক্ষেত্রে তা ইতিবাচক ফলও দিচ্ছে।
তহাওওর রানার প্রত্যার্পণ: এক বড় সাফল্য

তহাওওর রানা, যিনি পাকিস্তানের প্রাক্তন সেনা এবং লস্কর-ই-তইবার সক্রিয় সহচর, তাঁকে সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতে প্রত্যার্পণ করা হয়েছে। ২০০৮ সালের মুম্বই হামলার নেপথ্যে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলে ভারতের তদন্তকারী সংস্থাগুলির অভিযোগ। বহু বছরের আইনি লড়াইয়ের পর তাঁর প্রত্যার্পণ সম্ভব হওয়ায় ভারতের কূটনীতি ও তদন্ত প্রক্রিয়ায় এক বড় জয় এসেছে।
নতুন লক্ষ্য: মেহুল চোকসি এবং অন্যান্য পলাতক অপরাধী

তহাওওর রানার প্রত্যার্পণের রেশ কাটতে না কাটতেই এবার ভারতের নজর পড়েছে এমন আরও কিছু পলাতক অপরাধীর দিকে, যারা বিদেশে পালিয়ে রয়েছে এবং দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় বিচারব্যবস্থার হাত থেকে বাঁচতে চাইছে।
মেহুল চোকসি, যিনি পিএনবি (PNB) কেলেঙ্কারির মূল অভিযুক্ত, বর্তমানে অ্যান্টিগুয়ায় রয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে প্রায় ₹১৩,৫০০ কোটির জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ও বিদেশমন্ত্রক যৌথভাবে চোকসিকে দেশে ফিরিয়ে আনতে কূটনৈতিক ও আইনি পথ নিচ্ছে।
এছাড়াও যাদের দেশে ফেরানোর উদ্যোগ চলছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন—
নীরব মোদী (বর্তমানে লন্ডনে)
বিজয় মালিয়া (ব্রিটেনে প্রত্যার্পণ প্রক্রিয়া চলছে)
সঞ্জয় ভান্ডারি, কর ফাঁকি ও বেআইনি সম্পত্তি মামলায় অভিযুক্ত
সতীশ সঞ্জন ও কর্ণ মালহোত্রা, ব্যাংক প্রতারণায় অভিযুক্ত
কেন এত গুরুত্ব পাচ্ছে এই উদ্যোগ?

বিশ্বজুড়ে ভারত তার কূটনৈতিক প্রভাব বাড়াচ্ছে। বিভিন্ন দেশে বসবাসরত ভারতীয় পলাতক অপরাধীদের ফেরানোর ক্ষেত্রে আগের তুলনায় এখন অনেক বেশি সাফল্য আসছে। বিশেষ করে সম্প্রতি যে দেশগুলি ভারতের সঙ্গে প্রত্যার্পণ চুক্তি বা সহযোগিতার পথে এগিয়েছে, তাদের মধ্যে আমেরিকা, ব্রিটেন, ইউএই এবং ডমিনিকা অন্যতম।
সরকারের বার্তা: কেউ রেহাই পাবে না
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে জানানো হয়েছে, “ভারতীয় বিচারব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে বিদেশে পালিয়ে থাকা অপরাধীরা যে দেশে থাকুক না কেন, তাদের প্রত্যার্পণ নিশ্চিত করতেই আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দেশের অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত অপরাধের ক্ষেত্রে কোনওরকম ছাড় দেওয়া হবে না।”
উপসংহার
তহাওওর রানার প্রত্যার্পণ নিঃসন্দেহে ভারতের এক বড় জয়। এই ঘটনার মাধ্যমে দেশের কূটনৈতিক অবস্থান আরও জোরদার হয়েছে এবং এখন নজর রয়েছে মেহুল চোকসি ও অন্য পলাতকদের উপর। আগামী দিনে এই প্রত্যার্পণ প্রক্রিয়াগুলি কতটা সফল হয়, সেটাই দেখার বিষয়।