“আমি চুরি করিনি মা”—এই শেষ বাক্যটিই বলে গেল সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্র। মিথ্যা অপবাদ, অপমান আর সমাজের চাপ তাকে ঠেলে দিল চরম সিদ্ধান্তে। এই এক মর্মান্তিক ঘটনা শুধু একটি প্রাণকেই নিঃশেষ করেনি, বরং কাঁপিয়ে দিয়েছে গোটা সমাজ এবং বিশেষত শিশুদের মানসিক জগৎ।

শিশুটি অভিযোগের শিকার হয়েছিল স্কুলে চুরির সন্দেহে। অথচ তার বিরুদ্ধে ছিল না কোনো প্রমাণ। শিক্ষক ও অভিভাবকদের অপমান, সহপাঠীদের কটুক্তি ও নিঃসঙ্গতা তাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে। শেষমেশ সে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়, রেখে যায় একটি চিরকুট—”আমি চুরি করিনি মা।”
সমাজে এর প্রভাব
এই ঘটনা সমাজে এক গভীর প্রশ্ন তোলে—কোন দিকে এগোচ্ছে আমাদের মূল্যবোধ? কেন আমরা শিশুদের কথা না শুনেই বিচার করে ফেলি? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে সহানুভূতি, মনোবিদের সহায়তা ও মনস্তাত্ত্বিক নিরাপত্তা প্রয়োজন, তার চূড়ান্ত অভাব এই ঘটনায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
শিশু মনে এর প্রতিক্রিয়া
এইরকম ঘটনা শিশুদের মনে ভয়, নিরাপত্তাহীনতা ও আত্মমূল্যায়নের সংকট তৈরি করে। অনেকেই নিজেদের ভুল না থাকা সত্ত্বেও অপরাধবোধে ভোগে। শিক্ষকদের কঠোরতা ও সহপাঠীদের ঠাট্টা শিশুমনে চিরস্থায়ী ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে। পরিণতিতে মানসিক রোগ, আত্মবিশ্বাস হারানো এবং ক্ষেত্রবিশেষে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞদের মত
মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের সঙ্গে আচরণে সর্বোচ্চ সংবেদনশীলতা প্রয়োজন। ছোট বয়সে মানসিকভাবে ভেঙে পড়া শিশুরা বড় হয়ে আত্মবিশ্বাসহীন, অবসাদগ্রস্ত এবং সমাজ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। একটি ভুল অভিযোগ জীবনের চেয়ে বড় হয়ে উঠতে পারে তাদের কাছে।
সমাধানের পথ
- স্কুলে কাউন্সেলিং চালু করা জরুরি।
- শিক্ষক ও অভিভাবকদের শিশুমনের প্রতি সংবেদনশীল করে তোলা প্রয়োজন।
- প্রতিটি অভিযোগ নিরপেক্ষভাবে খতিয়ে দেখতে হবে, প্রমাণ ছাড়া সিদ্ধান্ত নয়।
- সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে হবে মিডিয়া ও শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে।
“আমি চুরি করিনি মা”—শুধু একটি বাক্য নয়, এটি আমাদের বিবেকের দরজায় কড়া নাড়া। সময় এসেছে শিশুর প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানোর, নইলে আমরা হারাতে থাকব একের পর এক নিষ্পাপ প্রাণ—নিঃশব্দে, লজ্জায়, অপমানে।