গত কয়েক বছরে রাজ্য সরকার কর্তৃক নিযুক্ত সিভিক ভলেন্টিয়ারদের ঘিরে একের পর এক বিতর্ক সামনে এসেছে। কেউ ঘুষ নিতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ছেন, কেউ আবার শিশুদের উপর মানসিক নির্যাতনের মতো ঘৃণ্য কাজে যুক্ত থাকার অভিযোগে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছেন।
এইসব ঘটনার ফলে রাজ্যের সাধারণ মানুষের মধ্যে এক বড় প্রশ্ন উঠে এসেছে—মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্যতম প্রশংসিত বেকারত্ব দূরীকরণ প্রকল্প সিভিক ভলেন্টিয়ার নিয়োগ কি আজ প্রশ্নচিহ্নের মুখে?

ঘুষ ও দুর্নীতি: বিশ্বাসে চিড় ধরছে
সাম্প্রতিক এক ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যেখানে এক সিভিক ভলেন্টিয়ার ট্রাফিকের নামে গাড়ি থামিয়ে ঘুষ নিচ্ছেন। তদন্তে জানা যাচ্ছে, এটি প্রথম ঘটনা নয়। বিগত ছয় মাসে এমন অন্তত ৮টি অভিযোগ বিভিন্ন থানায় জমা পড়েছে।
শিশু নির্যাতনের অভিযোগ: সীমা ছাড়াচ্ছে ‘পাওয়ার’ মিসইউজ
এক স্কুল চত্বরের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, এক সিভিক ভলেন্টিয়ার এক কিশোরকে ‘শিক্ষা’ দেওয়ার নাম করে তার সঙ্গে অশালীন আচরণ করছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত চলছে, তবে এই ঘটনায় শিশু সুরক্ষা অধিকার নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

ভুল ব্যবস্থাপনার ফল কি মুখ্যমন্ত্রীর মহৎ উদ্যোগ নষ্ট হবে?
সিভিক ভলেন্টিয়ার প্রকল্পটি চালু হয়েছিল ২০১৩ সালে, উদ্দেশ্য ছিল যুব সমাজকে কর্মসংস্থান দেওয়া ও পুলিশ প্রশাসনে সহযোগিতা নিশ্চিত করা। তবে পরিকাঠামোগত ঘাটতি, যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাব ও নিয়মিত তদারকির অভাবে অনেকেই এই পদ ব্যবহার করছেন ক্ষমতার অপব্যবহারে।

বিশেষজ্ঞরা কি বলছেন?
সমাজতত্ত্ববিদ রিতা ভৌমিক জানাচ্ছেন, “সিস্টেম যদি অ্যাকাউন্টেবল না হয়, তাহলে এমন অপব্যবহার হবেই। নিয়মিত মনিটরিং ও জবাবদিহির ব্যবস্থা না থাকলে যেকোনো ভালো প্রকল্পই প্রশ্নের মুখে পড়ে।”
সমাধান কোথায়?
প্রত্যেক সিভিক ভলেন্টিয়ারকে মাসিক রিপোর্টিংয়ের আওতায় আনা
রেগুলার ট্রেনিং ও কাউন্সেলিং সেশন
দুর্নীতি বা হেনস্থার প্রমাণ মিললেই স্থায়ী বহিষ্কার
স্থানীয় জনগণের মতামত অনুযায়ী কর্মক্ষমতা যাচাই
উপসংহার: একটা ভালো উদ্যোগ শুধুমাত্র নীতিগত সিদ্ধান্তেই সীমাবদ্ধ থাকলে চলে না। বাস্তবায়নের প্রতিটি ধাপে স্বচ্ছতা, নিয়ন্ত্রণ ও সামাজিক দায়বদ্ধতা থাকাটা অত্যন্ত জরুরি। সিভিক ভলেন্টিয়ার প্রকল্পকে বাঁচাতে হলে এখনই কড়া পদক্ষেপ জরুরি। নাহলে ভবিষ্যতে এর পরিণতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।