কলকাতা, ২৯ মে ২০২৫ | রিপোর্টার: The Indian Chronicles Desk
“দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা। ঘরের দরজা বন্ধ। পাশের ফ্ল্যাট থেকে গন্ধ পেয়ে খবর দেয় প্রতিবেশীরা। দরজা ভাঙতেই উদ্ধার হয় একই পরিবারের চারজনের নিথর দেহ। খাটের কোণে পাওয়া যায় একটি চিরকুট— ‘আর পারছি না। দোষ আমাদের নয়, সময়ের।'” — এমন দৃশ্য আজ আর নতুন কিছু নয়। বরং উদ্বেগজনকভাবে নিয়মিত হয়ে উঠছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কলকাতা ও আশপাশের রাজ্যগুলিতে (বিশেষত পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড) পারিবারিক আত্মহত্যার ঘটনা বেড়েই চলেছে। ২০২৩-২০২৪ সালের মধ্যে শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গেই এ ধরনের ৩৭টি ঘটনা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, যার মধ্যে ২৬টি ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে আর্থিক সংকট জড়িত।

চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছে সমীক্ষা
২০২৪ সালে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (NCRB) ও ইনস্টিটিউট ফর মেন্টাল হেলথ রিসার্চ (IMHR) যৌথভাবে যে সমীক্ষা প্রকাশ করেছে, তা ভীষণভাবে উদ্বেগজনক:
- ৮৬% পারিবারিক আত্মহত্যার পেছনে রয়েছে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা।
- ৭১% আত্মহত্যাকারী কোনো মানসিক চিকিৎসা নেননি।
- ৬৪% ঘটনা ঘটেছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বা অ্যাপ-ভিত্তিক ঋণ নির্ভর পরিবারে।
➡️ উৎস: NCRB & IMHR Joint Survey, 2024

সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
সংবাদমাধ্যমে যখন আত্মহত্যার ঘটনা প্রচারিত হয়, তখন প্রায়ই দেখা যায় ছবি, চিরকুট এবং পারিবারিক তথ্য ‘ব্রেকিং নিউজ’ হিসেবে দেখানো হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই প্রবণতা “Werther Effect” তৈরি করতে পারে—যেখানে আত্মহত্যার খবর বেশি প্রচারিত হলে অনুরূপ ঘটনা বাড়ে।
➡️ বিশেষজ্ঞ মত: সেনসেশনাল না করে মানবিক কভারেজ জরুরি।

কেন বাড়ছে এই প্রবণতা?
- রোজগারের উৎস হারানো
- অসুস্থতা ও চিকিৎসার খরচ
- ঋণের বোঝা ও আর্থিক দুশ্চিন্তা
- সহায়তার অভাব ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতা
পশ্চিমবঙ্গে ২০২৩-২৪ সালের মধ্যে ৩৭টি পারিবারিক আত্মহত্যার ঘটনা সংবাদমাধ্যমে এসেছে, যার ২৬টি সরাসরি অর্থনৈতিক সমস্যার সঙ্গে জড়িত।
➡️ উৎস: News Media Reports (2023–2024)

সমাধান ও প্রতিরোধ: এখনই সময়
✅ সমাজের করণীয়
- পারিবারিক ও প্রতিবেশী পর্যবেক্ষণ বাড়ানো
- ঋণগ্রস্থদের প্রতি সহানুভূতিশীল মনোভাব
- মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি
✅ সরকারের করণীয়
- কম সুদের ঋণ সহজলভ্য করা
- মানসিক স্বাস্থ্য হেল্পলাইন ও কাউন্সেলিং সুবিধা বাড়ানো
- স্বনির্ভর প্রকল্প বাস্তবায়নে নজরদারি
✅ সংবাদমাধ্যমের করণীয়
- “কীভাবে” নয়, “কেন” আত্মহত্যা হয়েছে তা বোঝানো
- প্রতিবেদন শেষে সহায়তা সংস্থার তথ্য উল্লেখ করা
- গোপনীয়তা ও মর্যাদা রক্ষা করা
☎️ হেল্পলাইন নম্বর (সহায়তার জন্য):
- মেন্টাল হেলথ হেল্পলাইন: 9152987821 (২৪ ঘণ্টা)
- NIMHANS Distress Helpline: 080-46110007
- AASRA: 91-22-27546669 / 91-22-27546667