বিশেষ প্রতিবেদন | The Indian Chronicles
🗓️ ২ জুলাই, ২০২৫
🔥 “যেখানে গ্রীষ্ম মানেই ছুটি আর ভ্রমণ, সেখানে আজ মৃত্যু, দাবানল আর বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের আতঙ্ক। গরমে হাঁসফাঁস গোটা ইউরোপ।”

তীব্র তাপপ্রবাহে নাকাল ইউরোপ। গ্রীষ্মের শুরুতেই পারদ ছুঁয়েছে ৪৬ থেকে ৫০ ডিগ্রির ঘরে। ২০২৫ সালের জুনে যা ইউরোপীয় ইতিহাসে উষ্ণতম হিসেবে চিহ্নিত হতে চলেছে। ফ্রান্সে ১৯০০ স্কুল বন্ধ, ইটালিতে ১৭টি শহরে জারি হয়েছে লাল সতর্কতা, স্পেনে ছাপিয়েছে ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দাবানলে পুড়ছে গ্রিস ও তুরস্ক।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা ও কোপারনিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস জানাচ্ছে, বিশ্বব্যাপী উষ্ণতার যে হারে বৃদ্ধি হচ্ছে, তার দ্বিগুণ গতিতে গরম বাড়ছে ইউরোপে। এই প্রবণতা জলবায়ু পরিবর্তনের চরম দৃষ্টান্ত।
গরমের ভয়াবহতা: রেকর্ড তাপমাত্রায় ভেঙে পড়ছে জনজীবন

📍 স্পেন:
- লা গ্রানাদো শহরে পারদ ছুঁয়েছে ৪৬°C — যা গত ৬০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
- সরকারি আবহাওয়া সংস্থা AEMET জানিয়েছে, জুন মাসকে দেশের ইতিহাসে “উষ্ণতম জুন” হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে।
- ভূমধ্য উপকূলীয় এলাকাগুলিতে নতুন করে সতর্কতা জারি।
- জনসাধারণকে রাস্তায় বেরোতে নিষেধ করা হচ্ছে।
- হাসপাতালগুলিতে হিট স্ট্রোক, ডিহাইড্রেশনের সংখ্যা আগের তুলনায় দ্বিগুণ।
📍 ফ্রান্স:
- দেশের ১৬টি অঞ্চলে লাল সতর্কতা।
- ১৯০০টিরও বেশি স্কুল বন্ধ।
- আইফেল টাওয়ারের মতো পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়েছে।
- প্রশাসনের বার্তা— বয়স্ক ও শিশুরা ঘরের বাইরে যাবেন না।
- জল, ওষুধ, শীতলকরণ ব্যবস্থা দ্রুত সক্রিয় করার নির্দেশ।

📍 ইটালি:
- মিলান, রোম, বোলোনা সহ ১৭টি শহরে চরম সতর্কতা।
- দিনের উষ্ণতম সময়ে সমস্ত নির্মাণকাজ ও রাস্তাঘাটের কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ।
- বোলোনায় এক নির্মাণ শ্রমিক অতিরিক্ত তাপে মারা যান।
- বিদ্যুৎ বিভ্রাট পরিস্থিতিকে আরও সংকটজনক করে তুলছে।
📍 পর্তুগাল:
- মোরা শহরে পারদ ৪৬.৬°C ছুঁয়েছে।
- রাজধানী লিসবনে ৪২ ডিগ্রির আশঙ্কা।
- আইপিএমএ (পর্তুগিজ আবহাওয়া দফতর) জানিয়েছে, অন্তত আরও ৫-৬ দিন এই পরিস্থিতি চলবে।

📍 গ্রিস ও তুরস্ক:
- দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে দক্ষিণ আথেন্সে।
- বহু মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা হয়েছে।
- তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলেও দাবানলের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত।
📍 যুক্তরাজ্য:
- গড় তাপমাত্রা ৩৩°C ছাড়িয়ে গেছে—যা ইংল্যান্ডের জুনের গড়ের চেয়ে অনেক বেশি।
- উইম্বলডন টেনিসে অংশ নিতে আসা ক্রীড়াবিদ ও দর্শকদের মধ্যে হিট স্ট্রোকের ঘটনা ঘটেছে।
- যদিও অন্য দেশগুলির তুলনায় পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে।

বিজ্ঞানের চোখে এই তাপপ্রবাহ
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার মুখপাত্র ক্লেয়ার নালিস বলছেন:
“ইউরোপের উষ্ণতা বৃদ্ধির হার বিশ্বের গড়ের প্রায় দ্বিগুণ। এই প্রবণতা শুধু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নয়, বরং অবকাঠামোগত প্রস্তুতির অভাবকেও সামনে আনছে।”
মূল কারণ:
- উত্তর আফ্রিকা থেকে আসা উষ্ণ বায়ু
- ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে দীর্ঘ খরা
- বায়ুমণ্ডলে উচ্চচাপ বলয় সৃষ্টি হওয়া
- গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ ও বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির যৌথ প্রভাব
🏥 স্বাস্থ্য ও মানবিক প্রভাব
- বয়স্ক, শিশু ও অসুস্থ ব্যক্তিরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে।
- তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি পেরোলেই হিট স্ট্রোক, কিডনি বিকল হওয়া, হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে।
- হাসপাতালগুলিতে তৈরি রাখা হচ্ছে “কুলিং ইউনিট”।
- বহু শহরে তৈরি হচ্ছে “হিট শেল্টার জোন”—যেখানে মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে।
📢 প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও নির্দেশিকা
- জনসমক্ষে জল বিতরণ ব্যবস্থা।
- দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
- স্কুল, কলেজ, নির্মাণ, অ্যাডভেঞ্চার অ্যাক্টিভিটি বন্ধ।
- পর্যটন শিল্প মারাত্মক ক্ষতির মুখে।
📈 ভবিষ্যৎ সংকেত: জলবায়ু পরিবর্তনের সতর্ক ঘণ্টা
একের পর এক রেকর্ড ভেঙে যে ইউরোপ জ্বলছে, তা কেবল এই মুহূর্তের খবর নয়—এটা আগামী কয়েক দশকের পৃথিবীর ছবির ঝলক মাত্র। বিশ্ব উষ্ণায়ন যে কোনও রাষ্ট্র বা সীমানা মানে না, সেটা আজ আরও একবার প্রমাণিত হল।