২১ জুলাইয়ের ধর্মতলার সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবার একেবারে আক্রমণাত্মক মেজাজে। বিষয়? ভোটার তালিকা—যাকে ঘিরেই ২০২৬ সালের নির্বাচনী লড়াইয়ের প্রেক্ষাপট তৈরি করলেন তিনি।
তাঁর সরাসরি অভিযোগ, “ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে লক্ষ লক্ষ মানুষের। এটা বাংলার মানুষের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র।” নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে সম্মানের বার্তা থাকলেও, হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি—বিহারের মতো বাংলায় যদি ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়া হয়, ঘেরাও কর্মসূচি হবে।

❝ ভোটার তালিকা এখন রাজনৈতিক অস্ত্র ❞
মমতার দাবি, বিহারে ৪১ লক্ষ মানুষের নাম বাদ পড়েছে। বিজেপি এখন সেই ছক বাংলায় প্রয়োগ করতে চাইছে। তিনি বলেন—“বাংলায় কারও নাম বাদ দিতে দেব না! ভাষার উপর সন্ত্রাস হচ্ছে। মানব না, মানব না, মানব না।”
এই অবস্থানে যে তৃণমূল নেত্রী মূলত বাংলাভাষী মুসলিম ভোটারদের রক্ষা করতে চাইছেন, তা অনেকটাই স্পষ্ট। বিজেপির তরফে শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেছিলেন, ভোটার তালিকায় ‘অনুপ্রবেশকারী’ রোহিঙ্গাদের নাম রয়েছে। কিন্তু মমতা তার পাল্টা জবাবে প্রশ্ন তোলেন—“পৃথিবীতে যদি ১০-১৩ লক্ষ রোহিঙ্গা থাকে, বাংলায় ১৭ লক্ষ কীভাবে এল?”

❝ অনুপ্রবেশ নয়, এ লড়াই বাংলা ভাষার পরিচয়ের ❞
মমতা বিজেপির দাবি খণ্ডন করতে শুধু যুক্তি নয়, আবেগ ও সাংস্কৃতিক পরিচয়কে সামনে এনেছেন। তাঁর বক্তব্য—এ রাজ্যে ভোটার তালিকায় যারা আছেন, তারা সকলেই বাংলাভাষী। তাঁদের বাদ দেওয়ার অর্থ বাংলাভাষীদের উপর রাজনৈতিক আক্রমণ।
শুধু এ রাজ্য নয়, মমতা টেনে এনেছেন ভিন রাজ্যে বসবাসকারী মতুয়া, রাজবংশী ও সাধারণ বাংলাভাষীদের উপর হওয়া ‘অত্যাচার’-এর প্রসঙ্গও। দিল্লি, ওড়িশা, মহারাষ্ট্রে বাংলাভাষীদের উপর প্রশাসনিক হেনস্থার উদাহরণ তুলে ধরেছেন তিনি। এমনকি তিনি দাবি করেন, কেন্দ্রীয় সরকার নতুন নির্দেশিকায় বলেছে—‘বাংলাভাষী’ দেখলেই সন্দেহ করে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠাতে!
❝ ২০২৪ বনাম ২০২৫: কেমন বদলে গেল মমতার স্বর? ❞
বিশেষজ্ঞদের মতে, গত বছরের তুলনায় এবারের ২১ জুলাইয়ের বক্তৃতা অনেক বেশি আক্রমণাত্মক। ২০২৪-এ যেখানে ইডি-সিবিআই নিয়ে অভিযোগের সুর বেশি ছিল, ২০২৫-এ তা একেবারে পিছনে। এবার বাংলা ভাষা, পরিচয় ও ভোটার তালিকা নিয়েই মমতা গর্জে উঠেছেন।
বিজেপির ‘অনুপ্রবেশকারী’ আখ্যা নিয়ে যে মেরুকরণ রাজনীতি হচ্ছে, তাতে পাল্টা ‘বাঙালি অস্মিতা’র অস্ত্র তোলার চেষ্টা করছে তৃণমূল। এবং সেই অবস্থানে মমতা নিজের রাজনৈতিক কৌশল অনেকটাই শানিয়ে নিতে পেরেছেন বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।