পর্ণা চ্যাটার্জী, কলকাতাঃ তামিলনাড়ুর মন্দির নগরী মাদুরাইতে ভাইগাই নদী উপত্যকায় অবস্থিত একটি বিখ্যাত মন্দির মীনাক্ষী মন্দির।
শক্তির একরূপ দেবী মীনাক্ষী এবং তার সঙ্গী সুন্দরেশ্বর এই মন্দিরের প্রধান বিগ্রহ। মীনাক্ষী শব্দটি এসেছে ‘মীন’ এবং ‘অক্ষি’ কথাটা থেকে, যার অর্থ মাছের চোখ। দেবী মূর্তির চোখগুলি খুব সুন্দর যা নামের স্বার্থকতা বজায় রাখতে সক্ষম।
মীনাক্ষী মূর্তি আর পাঁচটা সাধারন দেবীমূর্তির থেকে আলাদা। এই মূর্তির তিনটি স্তন রয়েছে। পুরাণ মত অনুযায়ী রাজা মলয়ধ্বজ পাণ্ডে এবং রানী কাঞ্চনমালা পুত্র সন্তান লাভের আশায় শিবের পূজা করেন। তাদের কোলে একটি তিন বছরের অগ্নিজাত কন্যা জন্মায়। কিন্তু কন্যার তিনটি স্তন রয়েছে দেখে তারা আবার শিবের পূজা দিতে থাকেন। শিব তুষ্ট হয়ে বলেন এই কন্যাকে পুত্ররূপে পালন করতে। কন্যা বড় হয়ে যখন তার যোগ্য জীবনসঙ্গী পাবে তখন তার তৃতীয় স্তন খসে পড়বে। রাজা কন্যাকে পুত্ররূপে পালন করলেন এবং কন্যা বড় হলে তাকে রাজপাট তুলে দিলেন। কন্যা যখন সুন্দরেশ্বর রূপী শিবের দেখা পেলেন তখন সেই দৈববাণী সত্যি হয়, এবং তিনি পরিপূর্ণ নারী রূপ ফিরে পান।
দক্ষিণ ভারতের দ্রাবিড় স্থাপত্যের একটি উল্লেখযোগ্য নিদর্শন এই মন্দির। সব থেকে অবাক করা বিষয় এই যে, শোনা যায় এই মন্দির নাকি একটি মাত্র পাথর কেটে তৈরি।
প্রায় ৩৩ হাজার স্থাপত্য রয়েছে এই মন্দিরে। এই মন্দিরে চারটি গর্ভগৃহ রয়েছে। যাদের মধ্যে মীনাক্ষী দেবী ও সুন্দরেশ্বর এর গর্ভগৃহ দুটি প্রধান।
এই মন্দিরে ১২ টি সুউচ্চ গোপুরম রয়েছে যার মধ্যে প্রধান চারটি মন্দিরের চারদিকে রয়েছে। এই মন্দিরে হাজারটি পিলার সহ একটি বড় মণ্ডপ রয়েছে।
১৫২৬ সালে চিনাপ্পা নায়াক্কার এই মণ্ডপটি তৈরি করেন। শিবের নটরাজ মূর্তি রয়েছে এই মণ্ডপে। তীর্থযাত্রীদের থাকার জন্য এই মন্দিরে বিশাল বড় একটি চৌকি বা বিশ্রামাগার রয়েছে।
প্রতি বছর চৈত্র মাসে বারো দিন ধরে মীনাক্ষী দেবী ও সুন্দরেশ্বরের বিবাহ অনুষ্ঠান ‘মীনাক্ষী তিরুকাল্যানম’ পালিত হয়। এই অনুষ্ঠানে একটি শোভাযাত্রা বের হয় এবং তারপর বিষ্ণু দেব তার বোন মীনাক্ষীকে শিবের হাতে তুলে দেয়। এই অনুষ্ঠানে প্রতিবছর সামিল হয় অগণিত ভক্ত। এই মন্দিরে খুব জাঁকজমকের সঙ্গে নবরাত্রি পালিত হয়।