উত্তর দিনাজপুরের গোলইসুরা গ্রাম থেকে এক দুর্লভ সাহিত্য সম্পদ আবিষ্কার
সম্প্রতি উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জ থানার গোলইসুরা গ্রাম থেকে বাংলা সাহিত্যের এক মহামূল্যবান খণ্ডিত পুথি আবিষ্কার করেছেন বালুরঘাট কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সমিত কুমার সাহা। এই বিরল আবিষ্কারটি কবি জগত জিবনের রচিত মনসা বিষয়ক কাব্য “পদ্মামঙ্গল”। পুথিটি বিশ্লেষণ করে অধ্যাপক সাহা একটি গবেষণা গ্রন্থ রচনা করেছেন, যার নাম “আবিষ্কৃত মনসার পুথি জগত জিবন বিরচিত পদ্মামঙ্গল”। গ্রন্থটি কলকাতার অন্নপূর্ণা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে।

মনসা পূজা ও বাংলার সাহিত্য ঐতিহ্য
বাংলা সাহিত্যে মনসামঙ্গল কাব্য গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। মনসা দেবীর মাহাত্ম্য এবং চাঁদ সদাগরের বাণিজ্য যাত্রার কাহিনি বাংলার লোককথার অন্যতম আকর্ষণ। তবে, কবি জগত জিবনের লেখা “পদ্মামঙ্গল” নামে কোনো মনসামঙ্গল কাব্যের উল্লেখ এতদিন পাওয়া যায়নি। অধ্যাপক সাহার এই আবিষ্কার বাংলা সাহিত্যের এক নতুন অধ্যায় উন্মোচন করল।
পুথির বিষয়বস্তু ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব
এই পুথিতে বিভিন্ন দেবদেবীর কাহিনি, মনসার ক্রোধ, চাঁদ সদাগরের ব্যক্তিত্ব, দিনাজপুরের কৃষি ও শিল্প, এবং সতীদাহের বিরুদ্ধে বেহুলার প্রতিবাদ সুন্দরভাবে চিত্রিত হয়েছে। বিশেষত, দিনাজপুরের ঐতিহ্যবাহী ধোকরা শিল্প, তাঁতের শাড়ি এবং কৃষিজাত পণ্যের উল্লেখ পুথিটিকে অনন্য করে তুলেছে।

চাঁদ সদাগরের বাণিজ্য তালিকা:
- দিনাজপুর থেকে পাঠানো পণ্য: বরা ধানের চাল, নারিকেল, হলুদ, আম, জিরা, জাম, পাট, শাড়ি, ধোকরা শিল্প
- বিনিময় পদ্ধতি: হলুদের বিনিময়ে সোনা, নারিকেলের বদলে শঙ্খ, ধোকরার বদলে সুবর্ণ কাপড়
জি.আই. ট্যাগের দাবি
অধ্যাপক সমিত কুমার সাহা তাঁর গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, দক্ষিণ দিনাজপুরের কুশমন্ডি থানার ধোকরা শিল্প এবং গঙ্গারামপুরের তাঁতের শাড়ি-কে যদি জি.আই (Geographical Indication) ট্যাগ দেওয়া হয়, তবে তা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করবে।
বাংলা সাহিত্য গবেষণায় নতুন দিক
এই পুথি আবিষ্কার বাংলা সাহিত্যের গবেষণায় এক গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। গবেষক ও সাহিত্যপ্রেমীদের জন্য এটি এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। অধ্যাপক সাহার এই প্রচেষ্টা বাংলা সাহিত্যের বিস্মৃত অধ্যায়গুলিকে পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।
ড. সমিত কুমার সাহার এই গবেষণা গ্রন্থ ও আবিষ্কার বাংলা সাহিত্যের অনুরাগীদের জন্য এক বড় প্রাপ্তি। মনসামঙ্গল কাব্যের অজানা দিক উন্মোচিত হওয়ায় বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস আরও সমৃদ্ধ হলো। আশা করা যায়, ভবিষ্যতে এমন আরও দুর্লভ সাহিত্য-সম্পদ আমাদের সামনে আসবে।
📢 আপনার মতামত জানান! এই পুথি আবিষ্কার সম্পর্কে আপনার কী মত? মন্তব্য করে জানাতে ভুলবেন না!
(🔍 এই খবরটি শেয়ার করুন এবং বাংলা সাহিত্য প্রেমীদের জানান!)