আম্বুবাচি উৎসব ২০২৫: কামাখ্যা মন্দিরে তান্ত্রিক সাধনার মহাযাত্রা শুরু
গুয়াহাটি, আসাম – আজ আষাঢ় মাসের সপ্তমী থেকে শুরু হল হিন্দুধর্মের অন্যতম রহস্যময় ও শক্তিশালী তান্ত্রিক উৎসব আম্বুবাচি। প্রতিবছর এই সময় আসামের প্রাচীন কামাখ্যা মন্দিরে অনুষ্ঠিত হয় এই বিশেষ পূজা, যা নারীত্ব, উর্বরতা ও শক্তির এক অলৌকিক সম্মিলন।

এই উৎসব চলাকালীন কামাখ্যা মন্দিরের দরজা চারদিনের জন্য বন্ধ থাকে। কারণ, বিশ্বাস করা হয় দেবী কামাখ্যা এই সময় রজঃস্বলা হন। এই “অচল” সময়ে কোনো পূজা বা দর্শন হয় না। মন্দিরের দরজা আবার খোলা হয় চতুর্থ দিনে, যাকে বলা হয় “স্নান ও দর্পণ”।
🔎 আম্বুবাচির মূল ভাবনা কী?
আম্বুবাচি শব্দের অর্থ “জলের প্রবাহ” বা “ভূমির ঋতু”। প্রকৃতিতে যেমন বর্ষার আগমনে মাটি সজীব হয়, ঠিক তেমনই এই সময় দেবী কামাখ্যা রজঃস্বলা হন — এটাই মূল ধারণা। এটি শুধু ধর্মীয় নয়, বরং নারীত্বের প্রতি এক গৌরবময় সম্মান ও স্বীকৃতিও বটে।

🛕 কামাখ্যা মন্দির: শক্তির প্রাণকেন্দ্র
- কামাখ্যা ভারতের ৫১টি শক্তিপীঠের অন্যতম
- দেবী সতীর গর্ভযোনি এখানে পতিত হয়েছিল
- দেবী এখানে পূজিত হন “জননী” রূপে — জন্মদাত্রী শক্তির মূর্ত প্রতীক
তন্ত্রসাধনার মূল কেন্দ্র হিসেবেও কামাখ্যার খ্যাতি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে।

🧘 তান্ত্রিকদের তীর্থযাত্রা
আম্বুবাচিতে লক্ষ লক্ষ তীর্থযাত্রী কামাখ্যায় আসেন। আখড়া, সাধু, তান্ত্রিকদের দেখা মেলে মন্দির চত্বরে। গভীর ধ্যান, জপ, হোম, অগ্নিসাধনা — এই সময় কামাখ্যা হয়ে ওঠে এক জীবন্ত তন্ত্রপীঠ।

🗓️ উৎসবের চার দিনের পর্যায়ক্রম:
- প্রথম দিন: মন্দিরের দরজা বন্ধ, দেবী বিশ্রামে
- দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন: দর্শন ও পূজা সম্পূর্ণ বন্ধ
- চতুর্থ দিন: দেবীর স্নান ও দর্পণ শেষে দরজা খোলা হয়

🌍 বিশ্বজুড়ে আগত ভক্তদের ঢল
নেপাল, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা সহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বহু দেশ থেকে ভক্তেরা কামাখ্যায় আসেন। অনেক বিদেশি অনুসন্ধানীও এই সময়ে এই তন্ত্রোৎসব দেখতে আসেন।

🧬 নারীত্ব ও জৈবিক চক্রের সম্মান
আধুনিক সমাজে নারীর ঋতুচক্র এখনও বহু ট্যাবু ও কুসংস্কারের মধ্যে রয়েছে। অথচ হাজার হাজার বছর আগে থেকেই কামাখ্যায় এই ঋতুচক্রকেই পূজনীয় বলে গণ্য করা হয়েছে। নারীর সৃজনক্ষমতাকেই এখানে দেবীজ্ঞানে পুজো করা হয়।
আম্বুবাচি কেবলমাত্র একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয় — এটি নারীর শরীর, প্রকৃতি ও শক্তিকে ঘিরে এক আধ্যাত্মিক চিন্তার গভীর প্রতিফলন। কামাখ্যা মন্দিরে এই উৎসব আমাদের শিখিয়ে দেয়, নারীর জৈবিক চক্র কোনো লজ্জার নয়, বরং তা হল প্রকৃতির এক মহাশক্তির প্রকাশ।