আমরা প্রতিনিয়ত রাজনীতিবিদদের দোষারোপ করি—দুর্নীতির জন্য, ব্যর্থ নীতিমালার জন্য, অথবা দেশের সার্বিক দুরবস্থার জন্য। কিন্তু আমরা কি কখনও আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেদের প্রশ্ন করেছি—আমরাই বা দেশের জন্য কী করছি?
এই প্রশ্নটাই আজ সবচেয়ে জরুরি।

আঙুল তোলার সংস্কৃতি
বর্তমানে রাজনীতি যেন একপাক্ষিক নাটক হয়ে উঠেছে। নেতাদের প্রতিটি ভুল নিয়ে আমরা আলোচনা করি, ট্রল করি, ফেসবুক স্ট্যাটাস দিই। কিন্তু একটা প্রশ্ন অনেক সময়ই অপ্রকাশিত থেকে যায়—একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমাদের ভূমিকা কোথায়?
দেশ মানে শুধু সরকার নয়
রাষ্ট্রব্যবস্থা তিনটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে—সরকার, বিচারব্যবস্থা এবং জনগণ। সরকার যতই কর্মপরিকল্পনা তৈরি করুক না কেন, যদি জনগণ নিজের দায়িত্ব বুঝে না চলে, তাহলে সেই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হয় না। উদাহরণস্বরূপ, রাস্তা-ঘাট পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব শুধু পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশনের নয়। যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলা, নিয়ম না মেনে চলা, এই ছোট ছোট অভ্যাসগুলোই বৃহত্তর সমস্যার জন্ম দেয়।

ব্যক্তিগত সুবিধার আশায় দেশপ্রেম নয়
অনেক সময় দেশপ্রেমের সংজ্ঞা গুলিয়ে ফেলি আমরা। যখন সরকারি চাকরি পাই, স্কলারশিপ পাই, অথবা ভর্তুকি পাই—তখন আমরা ‘দেশের জন্য কিছু পেয়েছি’ বলে গর্ব করি। কিন্তু কখনো কি ভেবেছি আমরা দেশের জন্য কী দিয়েছি? শুধু নেওয়ার মানসিকতা থাকলে, সম্পর্ক কখনই দীর্ঘস্থায়ী হয় না—তা ব্যক্তি হোক কিংবা রাষ্ট্র।
নাগরিক দায়িত্ব কী হতে পারে?
ট্রাফিক নিয়ম মানা
কর প্রদান করা
শিশু ও প্রবীণদের অধিকার রক্ষা করা
সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া
পরিবেশ সচেতনতা বজায় রাখা
ভোটাধিকার প্রয়োগ করা ও সচেতনভাবে নেতা নির্বাচন করা

পরিবর্তন নিচ থেকে শুরু হয়
কোনো মহান নেতা একদিনে জন্মান না। তারা গড়ে ওঠেন একটি সচেতন সমাজের ভেতর থেকে। তাই পরিবর্তনের শুরুটা নিজের ঘর থেকেই করতে হবে। সন্তানকে সৎ ও দায়িত্বশীল মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা, প্রতিবেশীর পাশে দাঁড়ানো, বা সমাজে এক ফোঁটা ভালো কাজ করাও দেশপ্রেমের অংশ।
শেষ কথা
রাষ্ট্রের উন্নয়ন এককভাবে সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়, যদি না জনগণ নিজেকে সেই উন্নয়নের অংশ হিসেবে বিবেচনা করে। আজ সময় এসেছে, আমরা নিজের দিকে আঙুল তুলি—শুধু নেতাদের নয়।
দেশপ্রেম মানে শুধু ‘ভারত-বিরোধী’ বা ‘সরকার-বিরোধী’ স্লোগান নয়। দেশপ্রেম মানে নিজের কর্তব্য পালন করা—নিরবে, নিষ্ঠায়।