একে অপরের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তৈরি হওয়া সংসার আজ বিপন্ন। প্রেম, প্রতিশ্রুতি, ভরসা আর পারিবারিক বন্ধনের ভিত নড়ে উঠছে বারাসতের ঘরে ঘরে। গত জানুয়ারি থেকে মে মাস—মাত্র ৫ মাসে বারাসত পুলিশ জেলার নথিভুক্ত নিখোঁজের তালিকায় রয়েছেন ৫৩৬ জন মহিলা, যার মধ্যে প্রায় ৫০০ জনই গৃহবধূ।

প্রতিটি ঘটনায় পুলিশে নিখোঁজ ডায়েরি হয়েছে। অপহরণ নয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিজ ইচ্ছাতেই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেছেন তাঁরা।
আর এখানেই উঠছে এক ভয়াবহ প্রবণতার ইঙ্গিত—পরকীয়া বা extramarital affairs।
📉 পরিসংখ্যান যা সমাজকে ভাবাচ্ছে
পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে, নিখোঁজ গৃহবধূদের অনেকে ভিনরাজ্যে কর্মরত স্বামীর অনুপস্থিতিতে একাকীত্বে ভুগছিলেন। অনেকের স্বামী কাজের চাপে সময় দিতে পারতেন না। এই ফাঁকেই মোবাইলের মাধ্যমে অপরিচিত পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। কেউ পালিয়েছেন কোনও ব্যবসায়ীর সঙ্গে, কেউ ঠিকাদারের সঙ্গে, আবার কেউ প্রতিষ্ঠিত যুবকের সঙ্গে।

অনেকে সন্তান থাকা সত্ত্বেও সংসার ছেড়ে চলে গিয়েছেন। এমনকি, ২০০ জনের মতো ফিরে এলেও অনেকে ফেরার ইচ্ছা প্রকাশ করছেন না।
“আমরা প্রাপ্তবয়স্ক, আমাদের জীবনের সিদ্ধান্ত আমরাই নিতে পারি”—এমনটাই জবাব অনেক মহিলার।
🧠 সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ: সমস্যার গোড়ায় কী?

সমাজতত্ত্ব বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রবণতার মূল কারণ হলো:
- অতিরিক্ত মোবাইল নির্ভরতা
- দাম্পত্য জীবনে মনোযোগ ও আবেগের অভাব
- আর্থ-সামাজিক ব্যবধান
- সামাজিক চাপে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার চেষ্টা না থাকা
দাম্পত্যে যখন একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা বা সময় দেওয়ার অভাব ঘটে, তখন তৃতীয় ব্যক্তির প্রবেশ সহজ হয়।
🚨 পুলিশের চ্যালেঞ্জ: ফেরানো যাচ্ছে না অনেককেই

পুলিশ জানিয়েছে, নিখোঁজদের মধ্যে গৃহবধূ ছাড়া কিছু তরুণী বা নাবালিকাও আছেন, তবে সংখ্যাটি অতি নগণ্য। বরং সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে পালিয়ে যাওয়া গৃহবধূদের বাড়ি ফেরানো।
এক আধিকারিক বলেন, “এখনও যদি আমরা সচেতন না হই, পরিবার ও সমাজে এক গভীর সংকট নেমে আসবে।”
🧩 সমাধানের পথ কোথায়?

সমাধান কি শুধুই আইন দিয়ে সম্ভব? নাকি প্রয়োজন আরও গভীর পারিবারিক সংলাপ ও মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা?
বিশেষজ্ঞদের মতে,
- দাম্পত্য জীবনে সময় দেওয়া, বিশ্বাস গড়ে তোলা, পরস্পরের আবেগ বুঝে নেওয়া প্রয়োজন।
- সোশ্যাল মিডিয়ায় সম্পর্ক গড়ার প্রবণতা নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।
- পারিবারিক ও মানসিক পরামর্শদাতা (Counsellor)-দের ভূমিকা আরও বড় করা দরকার।
🕰️ এই প্রবণতা সময়ের সঙ্গে বাড়বে না কমবে?
সময়ের সঙ্গে কী এই প্রবণতা কমবে, নাকি আরও ভয়াবহ আকার নেবে? তা বলা কঠিন। তবে এটা নিশ্চিত—আজকের উদাসীনতা আগামী প্রজন্মের জন্য আরও অনিরাপদ সমাজ তৈরি করবে।
🔖 সংক্ষেপে
- বারাসতে ৫ মাসে নিখোঁজ ৫০০ গৃহবধূ
- অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরকীয়া বা সম্পর্ক ভাঙনের ইঙ্গিত
- পরিবারের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন অনেক নারী
- দাম্পত্যের ফাটলই মূল কারণ হিসেবে দেখছেন তদন্তকারীরা
- সামাজিক সচেতনতা ও পারস্পরিক সম্পর্ক রক্ষা করাই একমাত্র সমাধান