কলকাতা: বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলন (BGBS 2025)-এর প্রথম দিনেই বড় চমক। শিল্পমঞ্চে দেখা গেল না রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী শশী পাঁজা বা অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে! অথচ, মঞ্চ উজ্জ্বল করে রইলেন মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা অমিত মিত্র। এই ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক মহলে নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতায় অমিত মিত্র ‘কি-ম্যান’
মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন দেশের তাবড় শিল্পপতিরা— মুকেশ আম্বানি, সঞ্জীব গোয়েঙ্কা, সজ্জন জিন্দল প্রমুখ। এই বিশিষ্টজনদের সামনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “হি ইজ দ্য কি ম্যান টু আওয়ার গভর্নমেন্ট। হি নোজ দ্য ওয়ার্ল্ড ইকোনমি। উই আর থ্যাঙ্কফুল।” অর্থাৎ, অমিত মিত্রই সরকারের মূল ব্যক্তি এবং তিনি বিশ্ব অর্থনীতির বিষয়ে সুগভীর জ্ঞান রাখেন। মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের পরই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে—তাহলে কি মন্ত্রিসভার শিল্প ও অর্থ দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের গুরুত্ব কমছে?
শিল্পমঞ্চে কেন উপেক্ষিত শিল্পমন্ত্রী?
বাণিজ্য সম্মেলনের উদ্বোধনী মঞ্চে শিল্পমন্ত্রী শশী পাঁজাকে বসার সুযোগ দেওয়া হয়নি। এমনকি অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বা পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও দর্শক আসনেই ছিলেন। শুধুমাত্র একবার অতিথিদের স্বাগত জানাতে মঞ্চে উঠতে দেখা যায় শশী পাঁজাকে।
নবান্ন সূত্রের খবর, এবারের বাণিজ্য সম্মেলনের পরিকল্পনা ও অতিথিদের তালিকা প্রস্তুত করেছেন অমিত মিত্র। ঠিক করেছেন, কাকে কেমন গুরুত্ব দেওয়া হবে। মুখ্যমন্ত্রীও তাঁর সুপারিশ মেনেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ফলে, রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী হয়েও শশী পাঁজার গুরুত্ব কমে গেছে বলে মনে করছেন অনেকে।
অমিত মিত্রর উত্থান: সীমা থেকে ‘অসীমে’
এক সময় বাম আমলে বাংলার অর্থনীতির নীতি নির্ধারণ করতেন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত। বর্তমান তৃণমূল জমানায় সেই ভূমিকায় যেন ক্রমশ বড় হয়ে উঠছেন অমিত মিত্র।
২০০৯ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন রেলমন্ত্রী হন, তখনই ফিকির সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে অমিত মিত্রর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। ২০১১ সালে বাংলায় তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় এলে, দলে যোগ্য অর্থমন্ত্রী না থাকায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অমিত মিত্রকেই অর্থ দফতরের দায়িত্ব দেন।
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তিনি আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি, কিন্তু তাতেও তাঁর গুরুত্ব কমেনি। মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে রাজ্যের মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা করে রেখেছেন এবং অর্থনীতির নীতি নির্ধারণে এখনও তাঁর মতামতই মুখ্য।
বিজেপির কটাক্ষ: ‘নির্বাচিতরা ব্রাত্য, পরামর্শদাতারা প্রভাবশালী’
এই ঘটনায় বিরোধীরা স্বাভাবিকভাবেই সরব হয়েছে। বিজেপি নেতারা কটাক্ষ করে বলেছেন, “তৃণমূল সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা ব্রাত্য হয়ে পড়েছেন। সরকারের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন একজন পরামর্শদাতা!”
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেহেতু বিনিয়োগ টানতে অমিত মিত্রর অভিজ্ঞতাকে বেশি গুরুত্ব দেন, তাই তিনিই নীতি নির্ধারকের আসনে বসে রয়েছেন।
BGBS 2025-এ শিল্পমঞ্চে রাজ্যের শিল্পমন্ত্রীর না থাকা নিঃসন্দেহে একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। এতে রাজনীতির অভ্যন্তরীণ সমীকরণ বদলাচ্ছে কি না, তা সময়ই বলবে। তবে স্পষ্টতই, বাংলার শিল্প ও অর্থনৈতিক নীতির মূল চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছেন অমিত মিত্র। আগামী দিনে তাঁর ভূমিকা আরও কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, তা নজরে রাখার মতো বিষয়।
আপনার মতামত জানাতে কমেন্ট করুন! আপডেট পেতে আমাদের নিউজ পোর্টাল ফলো করুন।