দিল্লি, মুম্বাই, হায়দ্রাবাদ, কলকাতা, বেঙ্গালুরু কিংবা লক্ষ্ণৌ – কোরবানির ঈদ এলেই এসব শহরের পশুর হাটে নামে উপচে পড়া ভিড়। কিন্তু শুধু পশু কেনাবেচা নয়, ঈদুল আযহার সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক বিশাল অর্থনৈতিক চক্র, যা অনেকেই কল্পনাও করেন না।

🐄 ১. পশু কেনাবেচায় হাজার কোটি টাকা
ঈদের সময় ভারতে প্রায় ১.৫ কোটি পশু কোরবানি হয়। গড়ে প্রতি পশুর দাম যদি ₹২০,০০০–৪০,০০০ ধরা হয়, তাহলে শুধু এই সেক্টরেই লেনদেন হয় প্রায় ₹৩০,০০০ কোটি টাকার বেশি।
এই লেনদেনের ৯০% হয় হাতে হাতে নগদ, যার বেশিরভাগ অংশ যায় গ্রামীণ খামার মালিক ও পশু ব্যবসায়ীদের পকেটে।

🔪 ২. দেশীয় অস্ত্র ও ছুরি বাজার
গরু বা ছাগল কোরবানির জন্য প্রয়োজন হয় ৫–৭টি ধারালো অস্ত্র। ঈদের আগেই কলকাতা, হায়দ্রাবাদ, দিল্লির বাজারে ছুরি ও দা বিক্রি হয় দেদার। দিনে দিনে দোকান প্রতি বিক্রি হয় ₹৫০,০০০–₹১ লক্ষ পর্যন্ত। এই বাজার বছরে আয় করে ₹৫০০–৭০০ কোটি টাকা।

🧂 ৩. চামড়া ও সংরক্ষণ শিল্প
ঈদের সময় ১ কোটি চামড়া সংগ্রহ হয় পশু থেকে। গরুর চামড়া বিক্রি হয় ₹৫০০–₹৮০০ ও ছাগলের ₹৫০–₹১০০-এ। এভাবে চামড়া থেকে লেনদেন হয় প্রায় ₹৭০০–১,০০০ কোটি টাকা। এই চামড়াগুলো পরে ব্যবহৃত হয় লেদার গুডস ও রপ্তানির কাজে।

🧄 ৪. মসলা ও কাঁচা বাজার
মাংস রান্নায় বেড়ে যায় পেঁয়াজ, আদা, রসুন, দারুচিনি, এলাচ, লবঙ্গ ও তেলের চাহিদা। সরকার ও বাণিজ্য সংগঠনগুলির মতে, এই সময়ে ₹১০,০০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয় কাঁচা বাজারে।

🧊 ৫. ফ্রিজ ও হোম অ্যাপ্লায়েন্স
ঈদের সময়েই ফ্রিজ বিক্রির হারের গতি সবচেয়ে বেশি। বছরে যে ৭০–৮০ লক্ষ ফ্রিজ বিক্রি হয়, তার অন্তত ২৫% বিক্রি হয় ঈদের আগে-পরে। গড়ে ₹১৫,০০০ ধরে বিক্রির পরিমাণ দাঁড়ায় ₹৩,০০০–৫,০০০ কোটি টাকা।

🚛 ৬. পশু পরিবহন, বাঁশ, খুঁটি ও খামার ব্যয়
পশু আনার খরচ, বাঁশ ও দড়ির দাম বেড়ে যায় ঈদের সময়। অস্থায়ী পশু রাখার খাঁচা, খাদ্য, দড়ি– এসব ঘিরে তৈরি হয় ₹২,০০০–৩,০০০ কোটি টাকার বাজার।
এই সব লেনদেনের ৭০–৮০% উপকৃত হন গ্রামীণ ও নিম্নবিত্ত মানুষ – কৃষক, খামার ব্যবসায়ী, শ্রমিক, ছুরি বিক্রেতা, হকার ইত্যাদি। ঈদ তাদের কাছে শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, জীবিকার উৎসও।
ঈদের কোরবানি শুধু ত্যাগের প্রতীক নয় – এটি ভারতের অর্থনীতির এক ‘অদৃশ্য’ অংশ। কর্মসংস্থান, নগদ অর্থপ্রবাহ, উৎপাদন শিল্প – সবকিছুরই পেছনে থাকে এই উৎসবের বিশাল অবদান।
আপনি কি আগে কখনও এই বিশাল চক্রটি এভাবে দেখেছেন?