দ্য ইন্ডিয়ান ক্রনিকলস ডেস্ক
প্রকাশকাল: ১০ জুলাই ২০২৫
আজ গুরু পূর্ণিমা—ভারতীয় উপমহাদেশের আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যে এক মহামূল্যবান দিন। এই পবিত্র দিনে শ্রদ্ধা জানানো হয় সেইসব গুরুজন বা শিক্ষককে, যাঁরা আমাদের অজ্ঞতা থেকে জ্ঞানের পথে, অন্ধকার থেকে আলোয় নিয়ে যান। শুধু বিদ্যালয়ের শিক্ষক নন, জীবনের যে কোনো পর্যায়ে যাঁরা আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন, পথ দেখিয়েছেন—তাঁদের প্রতিও এই দিনে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়।

📜 ইতিহাস ও উৎস
গুরু পূর্ণিমা পালন করা হয় আষাঢ় মাসের পূর্ণিমা তিথিতে, যা সাধারণত জুন-জুলাই মাসে পড়ে। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, এই দিনেই বেদব্যাস জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন ‘মহাভারত’-এর রচয়িতা, ১৮টি পুরাণের সংকলক, এবং চারটি বেদকে শ্রেণিবদ্ধ করার কৃতিত্বও তাঁরই। তাই তাঁকে “আদি গুরু” বলা হয়, আর এই দিনকে বলা হয় “ব্যাস পূর্ণিমা”।

🕉️ ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি
হিন্দু ধর্মে, গুরু পূর্ণিমার মূল বার্তা হলো “গুরু ব্রহ্মা গুরু বিষ্ণু, গুরু দেবো মহেশ্বর”—অর্থাৎ গুরু হলেন স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা। এই দিনে শিষ্যরা নিজেদের গুরুদের পা ধুয়ে দেন, উপহার দেন, এবং তাঁদের আশীর্বাদ গ্রহণ করেন।
বৌদ্ধ ধর্মে, বিশ্বাস করা হয় এই দিনেই গৌতম বুদ্ধ তাঁর প্রথম ধর্মচক্র প্রবর্তন করেন সারনাথে, পাঁচ শিষ্যকে ‘ধর্ম’ প্রদান করে। তাই বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কাছেও এই দিন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
জৈন ধর্মে গুরু পূর্ণিমা পালিত হয় সেই স্মরণে, যখন মহাবীর স্বামী প্রথমবার তাঁর শিষ্যদের গুরু রূপে শিক্ষাদান করেন।

🏫 আধুনিক ভারতের প্রেক্ষাপটে গুরু পূর্ণিমা
আজকের দিনে গুরু পূর্ণিমা শুধু ধর্মীয় আচার নয়, শিক্ষাব্যবস্থা ও মানবিক সম্পর্কের প্রতীক। শিক্ষার্থীরা তাঁদের শিক্ষক, কোচ, মেন্টর এমনকি পিতামাতার প্রতিও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। অনেক স্কুল, কলেজ ও সংগঠন এই দিনে বিশেষ অনুষ্ঠান করে—কবিতা পাঠ, গুরু বন্দনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, এবং সম্মাননা প্রদান ইত্যাদি।
সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে ভেসে ওঠে “Happy Guru Purnima” পোস্ট, গুরুর স্মৃতিচারণ এবং প্রেরণাদায়ী বার্তা। অনেকেই তাঁদের জীবনের গুরুজনদের নিয়ে পোস্ট করে তাঁদের অবদানের কথা স্মরণ করেন।
💬 গুরুত্বপূর্ণ একটি বার্তা
আধুনিক যুগে যখন সম্পর্কগুলো হয়ে উঠছে ভার্চুয়াল, সেই সময় গুরু পূর্ণিমা আমাদের শেখায়—জীবনে একজন প্রকৃত গুরুর গুরুত্ব কখনোই হারিয়ে যেতে পারে না। তিনি শুধু বইয়ের পৃষ্ঠা শেখান না, শেখান কিভাবে জীবনকে বোঝা যায়, কিভাবে নিজের ভেতরের অন্ধকার দূর করে নিজের সর্বোচ্চ রূপে পৌঁছানো যায়।
🙏 উপসংহার
গুরু পূর্ণিমা আমাদের সংস্কৃতির, দর্শনের, এবং কৃতজ্ঞতার এক অনন্য দিন। এই দিনে শুধুমাত্র ধর্মীয় রীতিতে নয়, হৃদয় থেকে যদি আমরা গুরুর প্রতি কৃতজ্ঞ হই—তবেই এই দিন সত্যিকারের পূর্ণতা পায়।
আজকের দিনে চলুন সবাই একসাথে বলি—
“গুরুর কৃপা বিনা জ্ঞান নেই, গুরু ছাড়া উন্নতি নেই।”
শুভ গুরু পূর্ণিমা।