মহাবিশ্বের গভীর থেকে আসা এক প্রাচীন অতিথি ধূমকেতু 3I/ATLAS-এর প্রথম স্পষ্ট ছবি তুলেছে NASA-র হাবল টেলিস্কোপ। এটি ইতিহাসের মাত্র তৃতীয় ইন্টারস্টেলার অবজেক্ট, যা আমাদের সৌরজগত অতিক্রম করছে। এই ঐতিহাসিক পর্যবেক্ষণ মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
৩I/ATLAS: এক আন্তঃনাক্ষত্রিক আগন্তুক
NASA-এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, Comet 3I/ATLAS হল তৃতীয় শনাক্ত ইন্টারস্টেলার অবজেক্ট, যা আমাদের সৌরজগতের বাইরে থেকে এসেছে। এর আগে শুধুমাত্র ‘Oumuamua এবং Comet 2I/Borisov-কে শনাক্ত করা গিয়েছিল। তবে 3I/ATLAS বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি অন্য ধূমকেতুদের চেয়ে আলাদা, যার গঠন এবং গতি গবেষণার জন্য অত্যন্ত মূল্যবান।
এই ধূমকেতুটির আসা প্রায় ৮০,০০০ বছর আগের মহাজাগতিক ঘটনার স্মৃতি বহন করে। হাবলের তুলনামূলক স্পষ্ট এবং উচ্চ রেজোলিউশন ছবি গবেষকদের হাতে সেই ইতিহাস অনুধাবনের এক অপূর্ব সুযোগ এনে দিয়েছে।

বিজ্ঞানীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত
হাবল টেলিস্কোপ 3I/ATLAS-এর ছবিগুলি ধারণ করেছে এমন সময়ে, যখন এটি পৃথিবীর তুলনায় প্রায় ৪ বিলিয়ন মাইল দূরে অবস্থান করছিল। গবেষকরা বলছেন, এই ধূমকেতুর গঠনে এমন কিছু অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা অন্যান্য ধূমকেতু থেকে আলাদা।
গবেষণায় দেখা গেছে:
- এর কক্ষপথ অতিপার্শ্বীয় (hyperbolic), যা নির্দেশ করে এটি চিরতরে সৌরজগত ত্যাগ করবে।
- এর পৃষ্ঠতলের গঠন, আকার ও গ্যাসীয় চেহারা অত্যন্ত ভিন্ন।
- এর গতি প্রায় ৩৩ কিমি/সেকেন্ড, যা স্বাভাবিক ধূমকেতুর চেয়ে অনেক বেশি।
NASA-এর বিজ্ঞানী ড. কারেন মিচেল বলেন,
“আমরা প্রথমবারের মতো এই ধরনের একটি ধূমকেতুর ছবি এত স্পষ্টভাবে তুলতে সক্ষম হয়েছি। এটি আমাদের মহাকাশের অজানা ইতিহাস বোঝার এক বিরল সুযোগ এনে দিয়েছে।”
মহাবিশ্বের অতীতের জানালা খুলে দিল 3I/ATLAS
এই ধূমকেতুটির সাহায্যে বিজ্ঞানীরা আন্তঃনাক্ষত্রিক বস্তুর গঠন, উৎস ও গতিপথ বিশ্লেষণ করতে পারবেন। এতে করে বোঝা যাবে:
- অন্যান্য গ্রহ বা নক্ষত্রের তৈরি ধূলিকণা ও পদার্থ কেমন ছিল
- সেইসব অঞ্চলের রসায়ন ও তাপমাত্রা কেমন
- আমাদের সৌরজগতের বাইরের বস্তু কীভাবে গঠিত হচ্ছে বা হয়েছে
এছাড়া ভবিষ্যতের মহাকাশ অভিযান ও ইন্টারস্টেলার মিশনের জন্য এটি হতে পারে একটি মূল্যবান রেফারেন্স অবজেক্ট।
উপসংহার: হাবলের নজরে মহাকাশের বিস্ময়
Comet 3I/ATLAS-এর ছবি তুলে হাবল আরও একবার প্রমাণ করল, কেন এটি মহাকাশ গবেষণার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য যন্ত্রগুলির একটি। আমাদের গ্রহে বসে আমরা দেখতে পাচ্ছি একটি প্রাচীন, বহুদূরের বস্তু যা হয়তো কোনো এক নক্ষত্র ব্যবস্থার ধ্বংসাবশেষ।
এই আবিষ্কার শুধু জ্যোতির্বিজ্ঞানীদেরই নয়, মহাকাশপ্রেমীদের মনেও রোমাঞ্চ তৈরি করেছে।
📢 আপনিও কী মহাকাশ গবেষণায় আগ্রহী? নিচে কমেন্ট করুন এবং বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন এই চমকপ্রদ সংবাদ।