সম্প্রতি ইজরায়েল ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। যুদ্ধের আঁচ কেবল মধ্যপ্রাচ্যেই নয়, বরং ভারত সহ একাধিক দেশের অর্থনীতি ও দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংঘর্ষের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হতে পারে ভারত।

কোন কোন ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়তে পারে ভারতের উপর?
১. 🌍 জ্বালানি তেলের দাম ও সরবরাহ
ভারত তার মোট তেলের প্রায় ৮৫% আমদানি করে, যার বেশিরভাগই আসে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি থেকে। ইরান ও ইজরায়েল যুদ্ধের ফলে হরমুজ প্রণালী ও রেড সাগরে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই গুরুত্বপূর্ণ শিপিং রুটে সমস্যা তৈরি হলে তেলের দাম হু-হু করে বেড়ে যাবে, যা ভারতের মুদ্রাস্ফীতিকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।
➡ তেলের দাম বেড়ে গেলে পরিবহন, শিল্প ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচও বেড়ে যাবে। সাধারণ মানুষকেও তার প্রভাব টের পেতে হবে গ্যাস, ডিজেল ও বিদ্যুতের খরচ বৃদ্ধির মাধ্যমে।
২. 🍚 বাসমতী চাল রপ্তানি ও কৃষক সংকট
ভারতীয় বাসমতী চালের অন্যতম বড় বাজার ইরান। সেখানে প্রায় ৮.৫ লক্ষ টন চাল রপ্তানি হয় প্রতি বছর। কিন্তু যুদ্ধ পরিস্থিতিতে যদি বন্দর বন্ধ হয়ে যায় বা বাণিজ্য বাধা সৃষ্টি হয়, তবে ভারতের হরিয়ানা ও পাঞ্জাবের কৃষকরা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
➡ বাজারে চালের দাম পড়ে যেতে পারে। রপ্তানি বন্ধ হলে ঘরে চাল জমে গিয়ে কৃষকরা বড় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন।
৩. 🌐 সাবমেরিন কেবল ও ইন্টারনেট সংযোগে বিপর্যয়
বিশ্বের ৯৫% ইন্টারনেট ট্রাফিক সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে হয়ে থাকে। এই কেবলের বড় অংশই মধ্যপ্রাচ্য দিয়ে যায়। যুদ্ধ বা সন্ত্রাসের কারণে কেবল লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হলে ভারতের ব্যাংকিং, ডেটা সেন্টার ও ই-কমার্স পরিষেবা বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে।
➡ ইন্টারনেট ধীর বা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে ব্যাহত হবে অর্থনীতি, ডিজিটাল পেমেন্ট ও সরকারি পরিষেবা।
📉 সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রভাব
ক্ষেত্র | প্রভাব |
---|---|
তেল ও গ্যাস | দাম বৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি |
চাল রপ্তানি | কৃষকের লোকসান, মূল্য পতন |
ইন্টারনেট পরিষেবা | পরিষেবা ব্যাঘাত, সাইবার ঝুঁকি |
শিপিং ও ট্রেড | পরিবহণ ব্যয় বৃদ্ধি, বাণিজ্য ঝুঁকি |
ভারতের কী করণীয়?
✅ জ্বালানি আমদানি বহুমুখীকরণ: মধ্যপ্রাচ্যের বিকল্প হিসেবে আফ্রিকা ও আমেরিকার দিক দেখা উচিত।
✅ বাসমতী চাল রপ্তানির নতুন বাজার: সৌদি, ইউরোপ বা দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন বাজার গড়ে তোলা দরকার।
✅ ডিজিটাল ব্যাকআপ সিস্টেম: বিকল্প সাবমেরিন কেবল ও স্যাটেলাইট ইন্টারনেট প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরি।
✅ নতুন ট্রেড রুট: রাশিয়া বা ইন্দো-প্যাসিফিক বাণিজ্যপথে রপ্তানি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হোক।
ইজরায়েল ও ইরানের যুদ্ধ শুধু একটি আঞ্চলিক সংকট নয়, বরং ভারতের অর্থনীতি ও নাগরিক জীবনের উপর বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এখনই সময় কেন্দ্র সরকারের কৌশলগত পদক্ষেপ নেওয়ার, যাতে ভারত এই আন্তর্জাতিক অস্থিরতার ধাক্কা সামলাতে পারে।