জ্যৈষ্ঠ মাস মানেই তাপ, আম-কাঁঠালের মৌসুম আর তার সঙ্গে বাঙালির অন্যতম প্রিয় পারিবারিক উৎসব জামাইষষ্ঠী। এই দিনে শাশুড়ি মায়েরা তাঁদের জামাইদের আদরে আপ্যায়ন করেন, আর চলে মা ষষ্ঠীর পূজা। কিন্তু জানেন কি এই প্রথার পেছনে রয়েছে একটি চমকপ্রদ ইতিহাস ও লোককথা? আসুন জেনে নিই জামাইষষ্ঠীর উৎপত্তি, তাৎপর্য এবং আজকের প্রেক্ষাপটে এর বাস্তব চিত্র।

জামাইষষ্ঠীর ইতিহাস ও উৎপত্তি
জামাইষষ্ঠীর শুরু একটি প্রাচীন লোককথার ভিত্তিতে। জনশ্রুতি অনুযায়ী, এক গৃহবধূ শ্বশুরবাড়ির খাবার লুকিয়ে খেয়ে দোষ দিতেন পোষা বিড়ালের ওপর। মা ষষ্ঠীর বাহন বিড়াল অবমানিত হওয়ায় দেবী ক্রোধে সেই গৃহবধূর সন্তানদের হরণ করেন। পরে অনুতপ্ত হয়ে গৃহবধূ মা ষষ্ঠীর পূজা করলে তিনি সন্তানদের ফিরিয়ে দেন। এই ঘটনার পর থেকেই ষষ্ঠী তিথিতে মেয়ের শ্বশুরবাড়ি থেকে জামাইকে ডেকে এনে পুজোর আয়োজন ও আপ্যায়নের রীতির সূচনা ঘটে।

কেন পালন করা হয় জামাইষষ্ঠী?
- জামাইয়ের মঙ্গল কামনায় মা ষষ্ঠীর পূজা
- পারিবারিক সম্পর্ক মজবুত করার প্রতীক
- শাশুড়ির শুভকামনা ও আশীর্বাদ প্রদান
- প্রাচীন সংস্কার অনুযায়ী, সন্তানের কামনায় ষষ্ঠীপূজা

জামাইষষ্ঠীর রীতি ও খাওয়া-দাওয়া
- জামাইয়ের হাতে হলুদ সুতো বাঁধা
- কপালে তেল-হলুদের ফোঁটা
- পাতে পরিবেশন: পোলাও, মাটন, ইলিশ, লিচু, আম, পায়েস, রসগোল্লা
- উপহার: জামা-কাপড়, গয়না, মানিপ্যাকেট ইত্যাদি
আধুনিক প্রেক্ষাপটে জামাইষষ্ঠী
আগে ঘরোয়া আঙ্গিনায় সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন জামাইষষ্ঠী পালিত হয় রেস্তোরাঁয়, হোটেলে বা রিসোর্টে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ভরে যায় জামাইয়ের ছবি আর স্পেশাল মেনুর ভিডিওতে।

জামাইষষ্ঠী শুধুমাত্র একদিনের উৎসব নয় – এটি বাঙালির পারিবারিক সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। সম্পর্কের উষ্ণতা ও শ্রদ্ধার বন্ধনে বাঁধা এই দিনটি কালের ধারায় আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক ও প্রিয়।