মাইকেল মধুসূদনের খিদিরপুরের বাড়ি নিয়ে পুরসভার সতর্কতা, প্রোমোটারদের ছক বানচাল করতে হেরিটেজ বিভাগের সক্রিয়তা
খিদিরপুর, কলকাতা:
ফ্যান্সি মার্কেটের সামনে একটি জরাজীর্ণ পুরনো দোতলা বাড়ি। বেপরোয়া নগরায়নের চাপে পড়ে আজ তার অস্তিত্বই সংকটে। অথচ ইতিহাস বলে, এই বাড়িটিই একসময় বাসস্থান ছিল আধুনিক বাংলা সাহিত্যের পথিকৃৎ মাইকেল মধুসূদন দত্তের। আর সেই প্রেক্ষাপটে এবার প্রোমোটারদের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে সাফ জবাব দিল কলকাতা পুরসভা—”এই বাড়ি ভাঙা যাবে না, কোনওভাবেই নয়।”

প্রয়াণ দিবসের প্রাক্কালে এমনই সাফ বার্তা দিল কলকাতা পুরসভার হেরিটেজ বিভাগ। পুরসভা জানিয়েছে, বাড়ির ঐতিহাসিক মূল্য বিচার করে এটিকে হেরিটেজ তালিকাভুক্ত করার প্রক্রিয়া জারি রয়েছে। পুরসভার হেরিটেজ শাখা থেকে জানানো হয়েছে, যেকোনও মূল্যে এই স্থাপত্য রক্ষা করা হবে। স্থানীয় সূত্র অনুযায়ী, একটি আদালতের রায়ে প্রোমোটারদের পক্ষে রায় যাওয়ার পরই পরিস্থিতি ঘোলা হয়ে উঠেছিল।
তবে কলকাতা পুরসভা সেই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আবেদন করেছে। মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, “আমরা নিশ্চিত করছি যে কোনও নির্মাণকাজ সেখানে আপাতত হবে না। ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিচার করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

তিনি আরও বলেন, “মাইকেল মধুসূদন দত্ত বহু জায়গায় বসবাস করলেও খিদিরপুরের এই বাড়িটির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। যদিও দীর্ঘকাল তিনি এখানেই ছিলেন কি না, তার নির্ভরযোগ্য প্রমাণ এখনও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
এদিকে হেরিটেজ আন্দোলনের কর্মীরা ও স্থানীয় নাগরিকরা পুরসভার পাশে দাঁড়িয়ে বলেছেন, প্রশাসন যেন দ্রুত বাড়িটির মালিকানা সংক্রান্ত সমস্যা সমাধান করে সংরক্ষণের কাজ শুরু করে।
পুরসভার মেয়র পরিষদ সদস্য স্বপন সমাদ্দারও জানান, “আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এই ঐতিহাসিক নিদর্শনকে রক্ষা করতে চাই। প্রতিটি আইনি ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।”
তহবিল সংগ্রহ, রক্ষণাবেক্ষণ, ইতিহাস নিরীক্ষা—সব দিকেই ইতিমধ্যে কলকাতা পুরসভা সক্রিয়। তবে এই ঐতিহ্য রক্ষার লড়াইয়ে প্রোমোটিংয়ের দৌরাত্ম্য রুখতে আরও কঠোর হতে হবে প্রশাসনকে। শহরের এক গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক সম্পদ কি এইভাবে হারিয়ে যাবে, নাকি সময় থাকতে জেগে উঠবে কলকাতা?