“কলকাতা” নামটা উচ্চারণ করলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে হলুদ ট্যাক্সি, বইয়ের গন্ধমাখা কলেজ স্ট্রিট, অথবা এক কাপ লাল চায়ের পাশে আড্ডায় মেতে থাকা কিছু প্রাণবন্ত মুখ। কিন্তু এই শহরটা কেবলই ভাত-ফিশ আর রসগোল্লার শহর নয়—এ এক ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক আর আধুনিকতার মোহময় সংমিশ্রণ। এই শহরের অলিগলি ঘুরলে আপনি খুঁজে পাবেন এমন কিছু তথ্য, যা হয়তো পর্যটন বইতেও লেখা নেই।
ট্রামের শহর, বৃক্ষের ছায়া: এক অন্যরকম কলকাতা

এনজয় ট্রাভেলের তথ্যমতে, কলকাতা ভারতের একমাত্র ট্রামচালিত শহর, এবং এশিয়ার সবচেয়ে প্রাচীন ট্রাম নেটওয়ার্ক এখানেই। রাজপথের উপর দিয়ে ধীরে বয়ে যাওয়া এই ট্রাম যেন সময়ের গায়ে লেখা এক চলন্ত কবিতা।

আর যদি প্রকৃতির ছোঁয়া খুঁজতে চান, চলে যান আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু ইন্ডিয়ান বোটানিক গার্ডেন-এ। এখানে দাঁড়িয়ে আছে বিশ্বের বৃহত্তম বটগাছ, যার বিস্তার যেন প্রকৃতির অনন্ত ভালোবাসার প্রতীক।
ঐতিহাসিক রাজধানী ও স্বাধীনতার শিকড়: কলকাতার রাজনৈতিক পরিচয়

কলকাতা এক সময় ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী ছিল। এখান থেকেই ছড়িয়ে পড়েছিল জাতীয়তাবাদের আগুন—যে আগুনে জ্বলেছিল বিপ্লবী আন্দোলন, স্বদেশী বয়কট, এবং জন্ম হয়েছিল নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মতো মহামানবদের।
ভোজনরসিকদের স্বর্গ: খাবারের শহর কলকাতা

এ শহরের গন্ধে-মশলায় মেশানো রয়েছে ইতিহাস ও আবেগ। শুধু রসগোল্লা আর সন্দেশ নয়, কলকাতার খাদ্যাভ্যাসে জায়গা করে নিয়েছে বিরল মেনু যেমন—আলু দিয়ে বিরিয়ানি বা কোষা মাংস। খাবার এখানে শুধু খাবার নয়, এটি এক সাংস্কৃতিক স্মারক।
সাহিত্য, শিল্প আর নোবেল: মননের এক জাগ্রত ভূমি

এই শহরকে বলা হয় “City of Palaces“। কিন্তু তা কেবল স্থাপত্যের জন্য নয়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মাদার তেরেসা, অমর্ত্য সেন সহ ছয়জন নোবেলজয়ীর জন্মভূমি বলেই এই শহর মনন ও মানবিকতার অনন্য সাক্ষ্য। কলেজ স্ট্রিট, রবীন্দ্র সদন বা কফি হাউস—সবই যেন এক এক টুকরো মেধার অক্ষয় চিহ্ন।
সুন্দরবন: বাঘ আর বনভূমির শ্বাস

বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন পশ্চিমবঙ্গেই। এটি ইউনেস্কো স্বীকৃত বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান এবং বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার-এর আবাসস্থল। প্রকৃতি, বিপন্নতা আর সংগ্রামের এক অভূতপূর্ব কাহিনি এখানে প্রতিদিন লেখা হয়।
সংস্কৃতি মানেই আড্ডা, গান আর বিবাহের অনন্যতা

বাঙালিরা গানপাগল জাতি। রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুলগীতি, বাউল—এই সুরে মিশে থাকে জীবনদর্শন। বাঙালি বিয়ের রীতিতেও রয়েছে এক ভিন্নতর আবেগ—শাঁখা-পলা, অলতা আর পিঁড়েতে বসে বর দেখা, সব কিছুতেই রয়েছে বাঙালিয়ানার গর্ব।
ফুটবল, পোলো এবং আধুনিক যোগাযোগব্যবস্থা

সল্টলেক স্টেডিয়াম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ফুটবল স্টেডিয়াম। আবার এখানে রয়েছে যুক্তরাজ্যের বাইরে প্রতিষ্ঠিত প্রাচীনতম পোলো ক্লাব। পাশাপাশি, কলকাতা ভারতের প্রথম আন্ডারওয়াটার মেট্রো ট্রেন এবং দক্ষিণেশ্বর স্কাইওয়াক এর গর্বিত আধুনিক মুখ।
কলকাতা শুধুই একটি শহর নয়—এ এক অনুভূতি। এখানে ইতিহাস, সংস্কৃতি, খাবার, মানুষ, গান, আড্ডা—সব কিছুর মধ্যে লুকিয়ে আছে এক নিরবধি আত্মা। আপনি যদি কখনও কলকাতায় না এসে থাকেন, তবে আপনি হারিয়ে ফেলেছেন ভারতের এক মহাকাব্যিক অধ্যায়।