- অনিন্দ্যর লেখা
সকালে টালিগঞ্জ ফাঁকা। একটা চায়ের দোকানের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল রণদীপ—হাত-পা ছুঁয়ে ফেলতে চাওয়া ক্লান্তি আর চোখে লেগে থাকা রাতের শেষ আলো।
সে সাংবাদিক। না, আজকাল সে নিজেকে আর সাংবাদিক ভাবে না। ভাবে এক ‘দেখতে পাওয়া মানুষ’—যে সব দেখে, কিন্তু ঠিক লেখা হয়ে ওঠে না। তবু আজ সকালটা অন্যরকম।
এক বৃদ্ধ ভিখিরি, ডান পা নেই, প্লাস্টিকের গ্লাসে চা চেয়ে বলল,
“ছেলের খবর আছে রে? সে যে খবরে কাজ করতো একসময়…”
রণদীপ থমকে দাঁড়াল।
“কে? আমি?”
“হুঁ। চিনে ফেলেছি তোকে। তুই একদিন রাজাবাজারে আমার মেয়ের কথা জিজ্ঞেস করেছিলি… ও হারিয়ে গেছিল। তারপর তুইও হারিয়ে গেলি।”
রণদীপ হঠাৎ নিজেকে অপরাধী মনে করল। মেয়েটির নাম ছিল আরুশি—১৭ বছরের স্কুলছাত্রী, যার খোঁজে অনেকটা পাগল হয়ে গিয়েছিল শহর এক সময়। খবরে এসেছিল, তারপর চলে গেছিল।
শহরটা এমনই।
বড় কিছু ঘটে, আলো জ্বলে, মোমবাতি জ্বলে…
তারপর, আবার নিভে যায়।
সে হেঁটে হেঁটে গঙ্গার ধারে পৌঁছল। একদল ছাত্র বসে রিহার্সাল করছে—‘হে সম্মানিতা, প্রশ্ন হইতে ভয় পান কেন?’
রণদীপ চুপচাপ দাঁড়িয়ে শুনল। ওদের একটাও নাম জানে না। কিন্তু মনে হল, এরা যেন তার পুরোনো প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজছে।
গঙ্গার ওপারে মেট্রো চলছে, শহর দৌড়চ্ছে।
কিন্তু রণদীপ জানে, কলকাতা যতই ক্লান্ত হোক, সে কখনও প্রশ্ন তোলা থামায় না।
একটা ছেলেকে গুম করে দিলে, সে দেয়ালে লেখে—“আমার ভাই কোথায়?”
একটা মেয়ের ছবি মুছে দিলে, সে ট্রামের জানালায় আঁকে—“ও তো ফিরেই আসবে একদিন।”
একটা পুজোর পুরস্কার নিয়ে দলবাজি হলে, সে বলে—“প্রতিমা শুধু মূর্তি নয়, প্রতিবাদও বটে।”
রণদীপ জানে, এই শহরের সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য তার সন্দেহ।
সে ভক্ত, কিন্তু প্রশ্ন করে।
সে ভালোবাসে, কিন্তু চোখ বন্ধ করে না।
চায়ের দোকানে ফিরে এসে সে একটা পুরোনো ডায়েরি খুলল।
প্রথম পাতায় লেখা—
“আমরা যারা লিখি, তারা দায় নি—but শহর নেয়। তাই শহর কখনও মরে না।”
সামনের মোবাইল স্ক্রিনে নিউজ হেডলাইন:
“শহিদ দিবসে সংঘর্ষ—নিরব রাজ্যপাল”
সে হাসল। কলমটা হাতে নিল।
কারণ কলকাতা কখনও নিরব থাকে না। কলকাতা প্রশ্ন তোলে।
📣 আপনার শহর কি আজও প্রশ্ন তোলে? না কি আপনি শুধু উত্তর খোঁজেন?