দুর্গাপুজো ২০২৫ শুরু হতে আর

Days
Hours
Minutes
Seconds

দুর্গাপুজো ২০২৫ শুরু হতে আর

Days
Hours
Minutes
Seconds
Advertise your brand here -Contact 7603043747 (Call & Whatsapp)
Advertise your brand here -Contact 7603043747 (Call & Whatsapp)

“টানা রিক্সা: কলকাতার ঘামে ভেজা এক শহরের হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি”

"টানা রিক্সা একসময় ছিল কলকাতার নাড়ির স্পন্দন। আজ তা হারিয়ে যেতে বসেছে। এই কাহিনিতে উঠে এল এক শহরের মানবিকতার, লড়াইয়ের আর পরিবর্তনের ছায়াছবি।"

Table of Contents

Share Our Blog :

Facebook
WhatsApp
"টানা রিক্সা: কলকাতার ঘামে ভেজা এক শহরের হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি"

– অনিন্দ্যর লেখা

হাতঘড়ির কাঁটা ঘুরেছে, শহর বদলেছে, মানুষ বদলেছে—তবু কোনও এক শীতের সকালে উত্তর কলকাতার গলিপথে হঠাৎ যদি একখানা টানা রিক্সা চোখে পড়ে, হৃদয়ের ভেতর কেমন যেন পুরোনো দিনের কলকাতা সজীব হয়ে ওঠে। যেন বৃষ্টি ভেজা রাস্তায় কাদা মাখা পায়ে ছুটে চলেছে একটা অচেনা জীবন, ঘামে ভেজা এক রিক্সাওয়ালা, পেছনে বসা এক যাত্রী আর সামনে অগণিত গল্প।

এই সেই টানা রিক্সা, যেটা আজ প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে—তবুও যা কলকাতার এক অনন্য পরিচয়, একটুকরো ইতিহাস।

"টানা রিক্সা: কলকাতার ঘামে ভেজা এক শহরের হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি"

একসময় কলকাতার প্রাণ ছিল টানা রিক্সা

১৯ শতকের শেষদিকে ব্রিটিশ শাসিত কলকাতায় প্রথম দেখা মিলেছিল টানা রিক্সার। তখনকার বাঙালি সমাজে রিক্সা ছিল উচ্চবিত্তদের চলাফেরার এক ধরণের আভিজাত্য। জমিদার, সাহেব, ব্যবসায়ী—তাঁদের অনেকেই নিজেদের গন্তব্যে পৌঁছাতে এই মানবচালিত বাহনকেই বেছে নিতেন।

প্রথম দিকে মূলত চিনা ও জাপানি অভিবাসীরা কলকাতায় এই পেশায় যুক্ত ছিলেন। পরে ধীরে ধীরে পূর্ববঙ্গ থেকে আসা দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষরাই এই পেশার হাল ধরেন।

"টানা রিক্সা: কলকাতার ঘামে ভেজা এক শহরের হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি"

জীবনের বিনিময়ে জীবিকা

এই বাহনের একমাত্র ইঞ্জিন ছিল একজন মানুষ—তার গায়ের জোর, ফুসফুসের শক্তি আর অনমনীয় মানসিকতা। গরমে, বৃষ্টিতে, শীতে, বন্যায়—কিছুই থামাতে পারত না এই বাহনকে। শহরের অলিগলি, পেট ঘেঁষে চলা জল জমে থাকা রাস্তাগুলি, যেখানে ট্যাক্সি বা অটো পৌঁছাত না, সেখানে পৌঁছে দিত এই টানা রিক্সা।

রিক্সাওয়ালারা ছিল বাঙালির আত্মপরিচয়ের এক নিঃশব্দ অংশ—প্রতিদিন প্যাসেঞ্জারের ব্যাগ বয়ে দেওয়া, ছোট ছোট দোকানে পৌঁছে দেওয়া, পাড়ার বাচ্চাকে স্কুলে পৌঁছে দেওয়া—সবই করতেন নিঃশব্দে, অনুতাপহীন পরিশ্রমে।

"টানা রিক্সা: কলকাতার ঘামে ভেজা এক শহরের হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি"

আধুনিকতার ধাক্কায় পিছনে পড়ে যাওয়া

একবিংশ শতকের শুরুতেই কলকাতায় শহুরে জীবন যাত্রা অনেকটাই বদলে যায়। বাস, অটো, ট্যাক্সি, অ্যাপ-ক্যাব—সব কিছু ঢুকে পড়ে শহরের গায়ে। এবং সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় টানা রিক্সার অস্তিত্ব সংকট।

‘মানবাধিকার’-এর যুক্তিতে রাজ্য সরকার ২০০৫ সালে ঘোষণা করে শহর থেকে এই অমানবিক বাহন তুলে দেওয়া হবে। মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ঘোষণাও করেন এর বিরুদ্ধে আইন প্রণয়নের। কিন্তু তখন শহরের একাংশ রাস্তায় নামে—কারণ মানবচালিত বাহন মানেই কি অমানবিকতা?

"টানা রিক্সা: কলকাতার ঘামে ভেজা এক শহরের হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি"

টানা রিক্সার অস্তিত্বের লড়াই

এই রিক্সা শুধু একটা বাহন নয়, এটা অনেকের জীবিকা। অনেক রিক্সাওয়ালার বক্তব্য—“টানা রিক্সা ছাড়া বাঁচব কী করে? স্কুলে পড়িনি, লেখাপড়া জানি না, এটা ছাড়া কিছুই পারি না।”

মানবাধিকার বনাম মানবজীবন—এই দ্বন্দ্বেই আটকে গেছে টানা রিক্সা। কোনও একটি সমাধানের দিকে এগোতে পারেনি প্রশাসন। আজও উত্তর কলকাতার কিছু পুরনো পাড়া, যেমন শ্যামবাজার, মানিকতলা, হাতিবাগান বা কলেজ স্ট্রিটে এই রিক্সাগুলোর দেখা মেলে—কিন্তু সংখ্যাটা কমতে কমতে প্রায় নামমাত্রে এসে ঠেকেছে।

"টানা রিক্সা: কলকাতার ঘামে ভেজা এক শহরের হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি"

রিক্সাওয়ালাদের জীবনগল্প—একটি শহরের অন্তর্লীন কান্না

বাবুলাল মিস্ত্রি, পঞ্চান্ন বছরের এক টানা রিক্সাওয়ালা। ১৯৮৬ সালে পূর্ব বর্ধমান থেকে এসে শিয়ালদহ স্টেশনে পা রেখেছিলেন, তখন তাঁর বয়স মাত্র ১৭। জীবনের প্রথম রুটি রোজগার শুরু করেছিলেন রিক্সা টেনে। এখন বয়স হয়েছে, হাঁপ ধরে, তবুও রোজ সকাল ৬টায় রিক্সা নিয়ে বের হন।

“রোদ বৃষ্টি যা-ই হোক, গাড়িতে মানুষ তুলতেই হবে। নইলে বাড়িতে ছেলেমেয়ের মুখে ভাত যাবে কী করে?”—বাবুলালের গলায় অভিমান আর আত্মসম্মানের মিশেল।

"টানা রিক্সা: কলকাতার ঘামে ভেজা এক শহরের হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি"

কলকাতা কি ভুলে যাবে টানা রিক্সাকে?

একদিন টানা রিক্সা পুরোপুরি উঠে যাবে কলকাতা থেকে—এ কথা বলাই যায়। কিন্তু স্মৃতির অ্যালবামে, সাহিত্যে, সিনেমায়, ছবির ক্যানভাসে আর বাঙালির আত্মপরিচয়ে এই রিক্সা চিরকাল রয়ে যাবে।

সত্যজিৎ রায়ের মহানগর, মৃণাল সেনের একদিন প্রত্যেকে, ঋতুপর্ণ ঘোষের রেইনকোট—সবার মধ্যে দিয়ে এই বাহনটিই যেন হয়ে উঠেছে কলকাতার এক অন্তরসত্তা।

"টানা রিক্সা: কলকাতার ঘামে ভেজা এক শহরের হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি"

উপসংহার: এক শহরের শ্রদ্ধাঞ্জলি

টানা রিক্সা উঠে যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু এই শহরের হৃদস্পন্দনে রয়ে যাবে তার প্রতিচ্ছবি। এমন একটা বাহন, যেখানে যাত্রী বসে, আর চালক হাঁটে—সেটা শুধুই বাহন নয়, সেটা সময়ের মুখ। আমরা তাকে ‘অমানবিক’ বললেও, শহরের অনেক ‘মানব’ সেই ঘামে ভেজা পথেই জীবনের গল্প লিখেছেন।

হয়তো একদিন শিশুকে রূপকথার মতো করে বলতে হবে—”এক সময় ছিল এমন এক গাড়ি, যেটা চলত মানুষের গায়ে ভর দিয়ে, নাম ছিল—টানা রিক্সা।”

More Related Articles

"টানা রিক্সা: কলকাতার ঘামে ভেজা এক শহরের হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি"
সম্পাদকীয়
“টানা রিক্সা: কলকাতার ঘামে ভেজা এক শহরের হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি”

“টানা রিক্সা একসময় ছিল কলকাতার নাড়ির স্পন্দন। আজ তা হারিয়ে যেতে বসেছে। এই কাহিনিতে উঠে এল এক শহরের মানবিকতার, লড়াইয়ের আর পরিবর্তনের ছায়াছবি।”

Read More »
ভোটার তালিকাই এবার যুদ্ধক্ষেত্র! অনুপ্রবেশ বিতর্কে মমতার হুঙ্কার: "বাংলা ভাষার উপর সন্ত্রাস চলছে"
সংবাদ ও রাজনীতি
ভোটার তালিকাই এবার যুদ্ধক্ষেত্র! অনুপ্রবেশ বিতর্কে মমতার হুঙ্কার: “বাংলা ভাষার উপর সন্ত্রাস চলছে”

২১ জুলাইয়ের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট বার্তা দিলেন—২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ‘আসল লড়াই’ হবে ভোটার তালিকা ঘিরে। অনুপ্রবেশ বিতর্কে বিজেপির বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণে বাংলাভাষা ও পরিচয়ের রাজনীতি সামনে আনলেন তৃণমূল নেত্রী।

Read More »
“জয় বাংলা’ কাঁপাবে দিল্লি, ২০২৬-র পর বিজেপিকে বলাব ‘জয় বাংলা’: ধর্মতলায় হুঁশিয়ারি অভিষেকের”
সংবাদ ও রাজনীতি
“জয় বাংলা’ কাঁপাবে দিল্লি, ২০২৬-র পর বিজেপিকে বলাব ‘জয় বাংলা’: ধর্মতলায় হুঁশিয়ারি অভিষেকের”

২১ জুলাই শহিদ দিবসের মঞ্চ থেকে বিস্ফোরক ভাষণে বিজেপিকে আক্রমণ করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, বাংলার সংস্কৃতিকে যারা তাচ্ছিল্য করে, তাদের জবাব ২০২৬-এর নির্বাচনে মিলবে। দিল্লি কাঁপাতে ‘জয় বাংলা’র ডাক, হুঁশিয়ারি পদ্মফুল উপড়ে ফেলারও।

Read More »
সংবাদ ও রাজনীতি
“বাংলার ভাষায় কথা বললে গ্রেফতার? এবার দিল্লিতেই হবে লড়াই”: শহিদ মঞ্চ থেকে হুঁশিয়ারি মমতার

২১ জুলাই শহিদ দিবসের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষণ ছিল স্পষ্ট এবং আগুনঝরা। ‘বাংলা ভাষার উপর আক্রমণ চললে ছাড়বে না’, জানিয়ে তিনি ঘোষণা করলেন ২৭ জুলাই থেকে রাজ্যজুড়ে শুরু হবে নতুন ভাষা আন্দোলন। কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ তোলার পাশাপাশি বিজেপির ‘বাংলাবিদ্বেষী রাজনীতি’ ও ‘গ্রেপ্তার আতঙ্ক’ নিয়েও বিস্ফোরক মন্তব্য করেন তিনি।

Read More »
"ট্রামের ঘণ্টিতে ঘুম ভাঙতো কলকাতা – হারিয়ে যাওয়া এক শহরের সুর"
সম্পাদকীয়
“ট্রামের ঘণ্টিতে ঘুম ভাঙতো কলকাতা – হারিয়ে যাওয়া এক শহরের সুর”

“ট্রামের ঘণ্টিতে ঘুম ভাঙতো কলকাতা – হারিয়ে যাওয়া এক শহরের সুর”
একটা সময় কলকাতার সকাল মানেই ছিল ট্রামের টুংটাং আওয়াজ। সেই ধীর গতি, কাঠের সিট, আর কনডাক্টরের ঝনঝনে টিকিট ব্যাগ—এ সবই ছিল শহরের ছন্দের অংশ। সময়ের সাথে সব বদলে গেলেও হারিয়ে যাওয়া এই ট্রাম আজও বেঁচে আছে স্মৃতির শহরে।

Read More »
"সিঙারা-সীতাভোগের সুগন্ধে মোড়া এক শতাব্দীর গল্প—চিরতরে থেমে গেল ‘দেশবন্ধু মিষ্টান্ন ভাণ্ডার’-এর পদচারণা!"
সম্পাদকীয়
“সিঙারা-সীতাভোগের সুগন্ধে মোড়া এক শতাব্দীর গল্প—চিরতরে থেমে গেল ‘দেশবন্ধু মিষ্টান্ন ভাণ্ডার’-এর পদচারণা!”

একটা সময় ছিল, যখন হাওড়া ব্রিজ থেকে নামলেই ঘিয়ের গন্ধে মন ভরে যেত। আজ সেই ‘দেশবন্ধু মিষ্টান্ন ভাণ্ডার’ শুধুই স্মৃতি। এক শতাব্দীর ইতিহাসের ইতি টেনে চুপিচুপি হারিয়ে গেল কলকাতার মিষ্টির কিংবদন্তি ঠিকানা।

Read More »
error: Content is protected !!