কলকাতা, জুলাই ৩১: টানা বৃষ্টি যেন শহরের ধমনী রুদ্ধ করে দিয়েছে। এই জুলাই ছিল গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের মাস। এর ফলে একদিকে যেমন রেকর্ড ভাঙা জল জমেছে রাস্তায়, তেমনই যানজট আর জলাবদ্ধতা নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে কলকাতার মানুষের।
প্রশ্ন উঠছে—এই দুর্ভোগ থেকে কবে মিলবে স্বস্তি?
জুলাই মাসে রেকর্ড বৃষ্টি: শহর রেকর্ড করল ৪৫০ মিমি-রও বেশি
আবহাওয়া দফতরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি জুলাই মাসে কলকাতায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ৪৫০ মিমি-রও বেশি—যা গত ৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। দক্ষিণবঙ্গের ওপর একাধিক নিম্নচাপ এবং বঙ্গোপসাগরের সক্রিয় মৌসুমি বায়ু এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী।
বিশেষ করে ২৭ থেকে ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে শহরের অধিকাংশ এলাকা—গড়িয়াহাট, রাসবিহারী, নিউ আলিপুর, টালিগঞ্জ, ঠাকুরপুকুর, পার্ক সার্কাস—ছিল জলের তলায়।
এই পরিস্থিতি শুধু জনজীবন নয়, বিপর্যস্ত করেছে স্বাস্থ্যব্যবস্থা, জরুরি পরিষেবা এবং শহরের রোজগেরে মানুষদের যাতায়াত।

যানজট, জলাবদ্ধতা, ও প্রশাসনের উদ্যোগ
বৃষ্টির ফলে শহরের ট্র্যাফিক ব্যবস্থাও মুখ থুবড়ে পড়েছে। সকাল ও সন্ধের ব্যস্ত সময়ে এক-একটি গাড়িকে রাস্তার এক মাথা থেকে অন্য প্রান্তে পৌঁছাতে সময় লাগছে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত।
সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলি:
- এ.জে.সি বোস রোড ও এম.এল.এল রোড সংযোগস্থল
- ইএম বাইপাস (সায়েন্স সিটি থেকে আনন্দপুর)
- ধর্মতলা ও এসপ্লানেড
- বেহালা-টালিগঞ্জ করিডর
কলকাতা পুরসভা ও ড্রেনেজ বিভাগ দাবি করেছে, অতিবৃষ্টির কারণে প্রাচীন নিকাশিনালার উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ছে। যদিও কিছু এলাকায় পাম্প বসিয়ে জল সরানোর কাজ শুরু হয়েছে, তবে বাস্তবে অনেক জায়গায় এখনও অব্যাহত রয়েছে জলাবদ্ধতা।

আবহাওয়ার ভবিষ্যৎ পূর্বাভাস: কবে মিলবে স্বস্তি?
আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, ১ আগস্ট থেকে কিছুটা বিরতি মিলতে পারে বৃষ্টিতে। তবে সম্পূর্ণ শুকনো আবহাওয়া ফেরার সম্ভাবনা এখনও নেই। ২–৩ আগস্ট থেকে আবার হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।
সতর্কবার্তা:
- প্রবল বর্ষণের ফলে গাড়ি নিয়ে চলাচলে সাবধানতা অবলম্বন করুন
- জলাবদ্ধ রাস্তায় বৈদ্যুতিক খুঁটি বা তার এড়িয়ে চলুন
- বাচ্চা ও বয়স্কদের বাইরে বেরোতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে
উপসংহার: সাময়িক দুর্ভোগ, স্থায়ী সমাধান কোথায়?
কলকাতার মতো মেট্রোপলিটন শহরে প্রতি বর্ষায় এমন পরিস্থিতি প্রমাণ করে, পরিকাঠামোগত সংস্কার একান্ত প্রয়োজন। জল নিষ্কাশনের আধুনিক ব্যবস্থা, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন ও ট্র্যাফিক ম্যানেজমেন্টকে অগ্রাধিকার না দিলে, প্রতিবছর শহরবাসীকে এই দুর্ভোগের মুখোমুখি হতে হবে।
➡️ আপনার এলাকাতেও কি জল জমেছে বা ট্র্যাফিকে নাকাল হয়েছেন? নিচে কমেন্ট করে জানান। এই প্রতিবেদন শেয়ার করুন যাতে সচেতনতা আরও ছড়ায়।