প্রতিবেদক | The Indian Chronicles | ৩১ জুলাই, ২০২৫
ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়া (Special Summary Revision of Electoral Roll বা SIR) নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে ফের উত্তেজনা। এবারে অভিযোগের কেন্দ্রে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুথ লেভেল অফিসারদের (BLO) ‘হুমকি’ দেওয়ার অভিযোগ তুলে বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বুধবার দিল্লিতে সংসদ অধিবেশনে রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের কাছে একটি নোটিস জমা দেন।
শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। কোনও সিদ্ধান্তে আপত্তি থাকলে তা সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করা যেতে পারে। কিন্তু প্রশাসনিক কর্মীদের জনসমক্ষে হুমকি দেওয়া একেবারেই অসাংবিধানিক। এতে প্রমাণ হয়, রাজ্যে সাংবিধানিক শালীনতা ভঙ্গ হচ্ছে।”
তিনি আরও দাবি করেন, “সরকারি কর্মচারীরা ভয় এবং চাপে কাজ করছেন। BLO-রা নিজেরাই নির্বাচন কমিশনের কাছে নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়েছেন। এটি গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক সংকেত।”
‘অনুপ্রবেশকারীই তৃণমূলের সম্পদ’?
বিজেপির অভিযোগ আরও এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে শমীক বলেন, “ভারত কোনও ধর্মশালা নয়। যেই আসছে, এখানেই থেকে যাচ্ছে। আর এদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার কাজই করছে কমিশন। কিন্তু তৃণমূল তা ভালোভাবে নিচ্ছে না, কারণ এদের ভোটেই ওদের ক্ষমতা টিকে আছে।”
এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে রাজ্য রাজনীতিতে বিতর্ক আরও চড়ছে।
তৃণমূলের পাল্টা: ‘SIR মানেই Silent Invisible Rigging’
শমীকের অভিযোগের জবাব দিতে দেরি করেনি তৃণমূল কংগ্রেস। বুধবার, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তীব্র কটাক্ষে বলেন, “SIR মানে হচ্ছে Silent Invisible Rigging! প্রকৃত ভোটারদের নাম কেটে দেওয়া হচ্ছে, অথচ ট্র্যাক্টর, গরু, এমনকি কুকুরের নামেও রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেট জারি হচ্ছে। এটাকে কখনওই মেনে নেওয়া যাবে না।”
তিনি আরও হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “ওরা দু’টো নাম কেটে দেখাক, বাংলার মানুষ বুঝিয়ে দেবে কীভাবে জবাব দিতে হয়।”
রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে নির্বাচন প্রক্রিয়া
বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকা সংশোধন অভিযান শুরু হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় সন্দেহজনক ও ভুয়ো নাম বাদ দেওয়ার কাজ চলছে। কিন্তু বিজেপি ও তৃণমূল—দুই পক্ষই এই প্রক্রিয়াকে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখছে।
যেখানে বিজেপির দাবি, ভুয়ো ভোটার বাদ দেওয়ার কাজকে ‘জনস্বার্থে প্রয়োজনীয়’ বলে ব্যাখ্যা করছে, সেখানে তৃণমূলের অভিযোগ, এই প্রক্রিয়ার আড়ালে প্রকৃত ভোটারদের নাম ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দেওয়া হচ্ছে।
রাজ্যসভায় শমীকের নোটিস জমা দেওয়ার ঘটনায় একদিকে যেমন বিজেপির রাজনৈতিক চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে, অন্যদিকে তৃণমূলও তার কৌশলগত প্রতিরোধে এক ধাপ এগিয়ে গেছে। সামনে পঞ্চায়েত বা বিধানসভা নির্বাচন হলে, এই বিতর্ক যে আরও বাড়বে, তা বলাই বাহুল্য।