বিগত কয়েক বছর ধরে রাজ্যের দরিদ্র মানুষের জীবনের রসদ হয়ে উঠেছিল ১০০ দিনের কাজ প্রকল্প। সেই প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর, রাজ্যের প্রত্যন্ত এলাকার শ্রমজীবী মানুষ কার্যত বেঁচে থাকার লড়াইয়ে পড়ে গিয়েছিলেন। তবু কেউ হাল ছাড়েনি—চুপচাপ চলছিল লড়াই, অপেক্ষা ছিল ন্যায়বিচারের।
অবশেষে সেই প্রতীক্ষার দিন এল। কলকাতা হাই কোর্ট জানিয়ে দিল—“১ আগস্ট থেকে আবার শুরু হোক কাজ!”
সেই ঘোষণা যেন রাজ্যের লাখ লাখ মানুষের মুখে হাসি ফিরিয়ে দিল।
🏛️ আদালতের দরবারে নতুন আশার আলো
মঙ্গলবার, কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি চৈতালি চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ জানাল—মনরেগার ১০০ দিনের কাজ আবার চালু করতে কেন্দ্রীয় সরকার কোনও অজুহাত দিতে পারবে না। দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও, তার দায় সব মানুষের উপর চাপানো যায় না। যে চারটি জেলায় তদন্ত চলছে—হুগলি, পূর্ব বর্ধমান, মালদহ এবং দার্জিলিং—সেখানে নির্ধারিত প্রক্রিয়ায় আইন চলবে। কিন্তু বাকি রাজ্যের মানুষ কেন কাজ পাবেন না?
এই রায়ে যেমন আইনের ভারসাম্য রক্ষা পেল, তেমনই সামাজিক সুবিচারও প্রতিষ্ঠিত হল।
🗣️ নবান্নে প্রতিক্রিয়া: মুখ্যমন্ত্রীর কণ্ঠে ক্ষোভ, সঙ্গে দায়িত্ববোধ
রায় প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নবান্ন থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক জরুরি সাংবাদিক সম্মেলন করেন। চোখেমুখে ছিল আত্মবিশ্বাস, আর কণ্ঠে চাপা রাগ।
তিনি বললেন—
“আমরা জানতাম, আমরা ঠিক। যারা প্রকল্পের টাকা বন্ধ করেছিল, তারা গরিবের পেটে লাথি মেরেছিল। আজ আদালত সেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে।”
আরও বলেন,
“২৫ জুনকে সংবিধান হত্যা দিবস ঘোষণা করছে কেন্দ্র। এটা গণতন্ত্রের উপর এক সরাসরি আঘাত। এই ধরনের ফ্যাসিস্ট মনোভাবের বিরুদ্ধে লড়াই আমরা চালিয়ে যাব।”
একদিকে ছিল প্রশাসনিক গুরুত্ব, অন্যদিকে রাজনৈতিক তির—সাংবাদিক বৈঠক যেন পরিণত হল প্রতিবাদের মঞ্চে।
💰 দুর্নীতি তদন্ত এবং টাকার হিসেবের খতিয়ান
তবে দুর্নীতির অভিযোগ একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া হয়নি। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দল ও হাই কোর্ট নিযুক্ত স্ক্রুটিনি কমিটি মিলে এখন পর্যন্ত ২৪ কোটি টাকার ভুয়ো পেমেন্ট চিহ্নিত করেছে। নাম ছিল, কাজ ছিল না—এই অভিযোগই বড় হাতিয়ার করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার।
তবে হাই কোর্ট বলেছে,
“দোষীদের শাস্তি হোক, কিন্তু প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখা যাবে না।”
এই বক্তব্যে যেমন আইনের কঠোরতা রইল, তেমনই মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিও ছিল স্পষ্ট।
🌾 রাজনীতি, প্রশাসন ও জনজীবনের সংযোগরেখা
এই রায় ও মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া রাজ্যের রাজনীতিতে নতুন অধ্যায় শুরু করল।
একদিকে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতের তীব্রতা আরও বেড়েছে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের রুজির নিশ্চয়তায় নতুন আশা জাগছে। এখন দেখার বিষয়—কেন্দ্র আদৌ কবে টাকা ছাড়ে, প্রকল্পে কত তাড়াতাড়ি কাজ শুরু হয়, আর রাজ্য সরকার কীভাবে দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়।
১০০ দিনের কাজ প্রকল্প কোনও রাজনৈতিক দলের বিষয় নয়—এটা হাজার হাজার গরিব ঘরের খিদের বিরুদ্ধে অস্ত্র। সেই অস্ত্র ফিরিয়ে দেওয়ার পথে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে আদালত। মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া শুধু একটি দলীয় প্রতিক্রিয়া নয়—এ যেন বাংলার এক প্রবল আশা ও প্রতিজ্ঞার মুখর উচ্চারণ।
সময় বলবে—এই রায়ের ফল কীভাবে বদলে দেয় মানুষের জীবন।