২১ জুলাইয়ের শহিদ মঞ্চ থেকে ভাষা আন্দোলনের ডাক — মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষণ ঘিরে উত্তাল রাজনীতি
১৯৯৩ সালের শহিদদের স্মরণে আয়োজিত ২১ জুলাইয়ের শহিদ দিবস পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ দিন। প্রতি বছরের মতো এবছরও ধর্মতলায় তৃণমূল কংগ্রেসের জনসমুদ্র সাক্ষী থাকল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিরাচরিত হুঁশিয়ারি ও রাজনৈতিক বার্তার। তবে এবারের বার্তা শুধু রাজ্যের গণ্ডি পেরিয়ে পৌঁছে গেল দিল্লির দরবারে — বাংলা ভাষার উপর আক্রমণ হলে লড়াই হবে রাজধানীতেই।

“বাংলা বললে গ্রেফতার? আমি ছাড়ার লোক নই” — ভাষারক্ষার লড়াইয়ে মুখ্যমন্ত্রী
মঞ্চ থেকে মমতা সরাসরি বললেন, “বাংলায় কথা বলার জন্য যদি অন্য রাজ্যে কাউকে গ্রেফতার করা হয়, তাহলে সেই লড়াই হবে দিল্লিতে। আমি ছাড়ার লোক নই। সাহস থাকলে বাংলায় এসে করে দেখাক।”
তিনি আরও জানান, ২৭ জুলাই থেকে রাজ্যজুড়ে শুরু হবে ভাষা আন্দোলন। প্রতি শনিবার ও রবিবার বাংলা ভাষার উপর ‘আক্রমণের প্রতিবাদে’ মিটিং-মিছিলের নির্দেশ দিলেন তিনি।
বিজেপিকে নিশানা করে অভিযোগের তোপ
মমতার অভিযোগ, বাংলায় উন্নয়নের পরিধি দেখে বিজেপি ভয় পেয়েছে। তাই বঞ্চনার রাজনীতি করছে। বাংলা ভাষাকে টার্গেট করা হচ্ছে রাজনৈতিক কারণে। তিনি বলেন, “এখন বলছে মাছ খাবে না, মাংস খাবে না। এটা কি রেশন দোকান না কি ধর্মপুলিশ?”

“বাংলা থেকেই জাতীয় সঙ্গীত, নবজাগরণ, স্বাধীনতা” — বাংলার সম্মান রক্ষার অঙ্গীকার
মমতা বলেন, “বাংলা ভাষা রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিমচন্দ্র, নজরুলের জন্ম দিয়েছে। জাতীয় সঙ্গীত বাংলা থেকেই লেখা। বাংলা ভাষার উপরে এই সন্ত্রাস কেন?”
তিনি আরও জানান, ভাষা আন্দোলন বাংলার ইতিহাসের অংশ। এবারও প্রয়োজন হলে সেই আন্দোলনের পুনরাবৃত্তি হবে।
বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলির আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন
মমতা প্রশ্ন তোলেন, “ওড়িশায় ছাত্রীর উপর অত্যাচার, আগুন দিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। তার কী জবাব দেবে বিজেপি?”
তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, “বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদছে। ১০০০ জনেরও বেশি বাংলাভাষীকে জেলে পোরা হয়েছে, কাউকে রাজস্থান, কাউকে মধ্যপ্রদেশে। এটা চক্রান্ত নয়?”

শহিদদের সম্মানে, জনতার আবেগে উদ্বেল ধর্মতলা
মমতা এদিন পহেলগাঁওয়ে নিহত বাংলার শহিদ জওয়ান বিতান অধিকারীর ও ঝন্টু আলি শেখের পরিবারকে মঞ্চে ডেকে সম্মান জানান। এই দৃশ্য আবেগের সৃষ্টি করে গোটা সমাবেশে।

আগামী ভোটকে কেন্দ্র করে বার্তা: “জব্দ হবে, স্তব্ধ হবে”
মমতা বলেন, “এবার বলছি বদলা নয়, বদল চাই — নয়, বলছি ‘জব্দ হবে, স্তব্ধ হবে’। আমাদের দর্শন, তোমাদের বিসর্জন।” এই বক্তব্যে তিনি বিজেপিকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানালেন আগামী নির্বাচনের ফলাফলের মাধ্যমে।
শহিদ দিবস থেকে শুরু নতুন অধ্যায়?
১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই রাজপথে পুলিশ গুলিতে নিহত হন ১৩ জন যুব কংগ্রেস কর্মী। সেই থেকেই এই দিনটি শহিদ স্মরণে তৃণমূলের কাছে এক ধর্মীয় মর্যাদার সমাবেশ।
তৃণমূলের রাজনৈতিক উত্থান, ক্ষমতার পালাবদল, বাম সরকারের পতন—সবকিছুর সাক্ষী এই দিনটি। এবার সেই দিন থেকেই মমতার নতুন ভাষা আন্দোলনের ডাক তৃণমূলের রাজনৈতিক কৌশলে নতুন মোড় আনতে চলেছে কি না, সে দিকেই নজর রাজনৈতিক মহলের।