কলকাতার রাজপথে বুধবার এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। কলেজ স্কোয়ার থেকে ডোরিনা ক্রসিং পর্যন্ত তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিবাদ মিছিলে পা মেলালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে এই মিছিল শুধু রাজনীতি নয়— এক সর্বধর্ম সমন্বয়ের প্রতীকও হয়ে উঠল। মিছিলের সামনের সারিতে একসঙ্গে হাঁটলেন এক বৌদ্ধ সন্ন্যাসী ও এক মুসলিম মৌলবী। ঠিক তাঁদের পাশেই ছিলেন মমতা ও অভিষেক। যেন বার্তা— বাংলায় বিভাজনের রাজনীতি চলবে না।

ডোরিনা ক্রসিংয়ের মঞ্চে পৌঁছে মমতা নিজেই এই দুই ধর্মগুরুর উপস্থিতির জন্য তাঁদের ধন্যবাদ জানান। স্পষ্ট করেন— বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ঐক্যই হবে বাংলার মূল শক্তি।
কেন্দ্রের গোপন বিজ্ঞপ্তির বিরুদ্ধে ক্ষোভ
মমতার অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকার নীরবে একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছে বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে। তাতে বলা হয়েছে, সন্দেহ হলে বাংলাভাষীদের গ্রেফতার করে ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা যাবে। তিনি প্রশ্ন তোলেন— “একটা আধার বা প্যান কার্ড থাকলেও, কেবল ভাষার ভিত্তিতে কাউকে বাংলাদেশি বলা যায়?”


তিনি বলেন, “এই বিজ্ঞপ্তি লুকিয়ে করা হয়েছে। এটা আমরা চ্যালেঞ্জ করব। কাউকে আত্মীয়র বাড়ি বেড়াতে গেলেও গ্রেফতার করা হচ্ছে। এটা জরুরি অবস্থার থেকেও ভয়ঙ্কর।”
“আমি চুপ থাকব না”— স্পষ্ট বার্তা মমতার
সমাজমাধ্যমেও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। লেখেন, “আমি চুপ থাকব না, যতক্ষণ না বিজেপি এই বিভাজনের রাজনীতি বন্ধ না করে।” তাঁর মতে, এই ধরনের আচরণ ভারতের গণতন্ত্রে বিশ্বাসঘাতকতার নামান্তর।
অভিষেকের পোস্টে লড়াইয়ের বার্তা
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে লেখেন, “বাংলাভাষী শ্রমিকদের নিপীড়নের বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে আমাদের দল বদ্ধপরিকর। বিজেপির মনে রাখা উচিত, ‘বাংলা ভাষার অপমান মানেই বাংলার অপমান’।”
শিঙাড়া-জিলিপি-ধোসা বিতর্কেও কেন্দ্রকে নিশানা


সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের ‘অস্বাস্থ্যকর খাবার’ নিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তিতে শিঙাড়া-জিলিপি প্রসঙ্গ ঘিরে তৈরি হয় বিতর্ক। এদিন সেই বিষয়েও কেন্দ্রকে তুলোধোনা করেন মমতা। বলেন, “কে কী খাবেন, কী পরবেন, কে কোন ভাষায় কথা বলবেন, তা ব্যক্তিগত বিষয়। কেউ এর উপর হুকুম চালাতে পারে না।” তিনি বোঝাতে চেয়েছেন— খাদ্যাভ্যাস, সংস্কৃতি ও ভাষার অধিকারেই নিহিত ভারতের প্রকৃত বহুত্ববাদ।
সমন্বয়ের পথে বাংলা
মমতা মনে করিয়ে দেন, বাংলায় বহু ভিন্রাজ্যের মানুষ কাজ করতে আসেন। “আমরা তাঁদের সম্মান করি, ইজ্জত দিই। আর আপনারা (বিজেপি) অপমান করেন।” ধর্ম বা ভাষার ভিত্তিতে নাগরিকদের হেনস্থা করা যায় না— এমন বার্তাই দেন মুখ্যমন্ত্রী।