কলকাতা: বাংলা সংস্কৃতির আকাশে উজ্জ্বল এক নক্ষত্রের নাম মমতা শঙ্কর। একজন প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী, অভিনেত্রী এবং কোরিওগ্রাফার হিসেবে তিনি ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। সম্প্রতি ২০২৫ সালে ভারত সরকারের পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত হয়ে তিনি আবারও প্রমাণ করলেন তাঁর অনন্য সাংস্কৃতিক অবদান।

মমতা শঙ্কর শুধুমাত্র এক জন অভিনেত্রী নন, তিনি উদয় শঙ্করের কন্যা ও অমলা শঙ্করের উত্তরসূরি হিসেবে ভারতীয় আধুনিক নৃত্যের ধারাকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। তিনি সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, ঋতুপর্ণ ঘোষের মতো পরিচালকদ্বয়ের ছবিতে তাঁর অসামান্য অভিনয়ের জন্য বাংলা চলচ্চিত্রপ্রেমীদের হৃদয়ে স্থায়ী আসন গড়ে নিয়েছেন।
🎭 চলচ্চিত্র জগতে অসাধারণ অবদান
মমতা শঙ্করের চলচ্চিত্র যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৬ সালে মৃণাল সেনের ‘মৃগয়া’ দিয়ে। এরপর তিনি ‘অগতুক’, ‘শাখা প্রশাখা’, ‘উৎসব’, ‘মাছের ঝোল’, ‘প্রজাপতি’, ‘বিজয়ার পরে’ সহ একাধিক প্রশংসিত ছবিতে অভিনয় করেন।
অভিনয়ের জন্য প্রাপ্ত উল্লেখযোগ্য পুরস্কার:
- ‘অগতুক’– জাতীয় পুরস্কার
- ‘উৎসব’, ‘প্রজাপতি’, ‘বিজয়ার পরে’ – ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডস বাংলা

💃 নৃত্যজগতে নেতৃত্ব ও প্রতিষ্ঠান
১৯৭৮ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন নিজের ব্যালে সংস্থা – ‘মমতা শঙ্কর ব্যালে ট্রুপ’, যার পরিবেশনা ‘চণ্ডালিকা’, ‘মাদার আর্থ’, ‘শিকার’ আন্তর্জাতিক স্তরে খ্যাতি লাভ করে।
১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘উদয়ন কলা কেন্দ্র’ শিশু-কিশোরদের মধ্যে সামাজিক সচেতনতা ও মানবিক মূল্যবোধ গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে নৃত্যচর্চা চালিয়ে যাচ্ছে।
🌍 আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলা সংস্কৃতির প্রচারক
মমতা শঙ্করের ব্যালে ট্রুপ পারফর্ম করেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, যেমন:
- যুক্তরাষ্ট্র
- যুক্তরাজ্য
- জার্মানি
- জাপান
- অস্ট্রেলিয়া
তিনি বাংলার ঐতিহ্য ও শৈল্পিক ভাবনাকে পৌঁছে দিয়েছেন বৈশ্বিক দর্শকের কাছে।
🏅 ২০২৫-এ পদ্মশ্রী সম্মান: মমতা শঙ্করের প্রতিক্রিয়া
মমতা শঙ্কর বলেন,
“এই সম্মান আমার কাছে ঈশ্বরের আশীর্বাদের মতো। আমি সবসময় শিল্পকে শ্রদ্ধা করে কাজ করেছি, পুরস্কার আমার লক্ষ্য ছিল না। কিন্তু এই স্বীকৃতি সত্যিই বিশেষ।”
মমতা শঙ্কর শুধু একজন শিল্পী নন, তিনি বাংলা সংস্কৃতির আন্তর্জাতিক দূত। তাঁর কাজ, স্বপ্ন ও কৃতিত্ব ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিল্পীদের জন্য পথপ্রদর্শক হয়ে থাকবে।