Mrs Chatterjee Vs Norway এই মুহুর্তের সব থেকে বেশী আলোচিত নতুন বলিউড চলচিত্র যা একটি বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে হলেও প্রকৃত সত্য দেখানো হয়নি। এ বিষয়ে দেশজুড়ে সবার আগে আমরাই খবর করি কারন বলিউডের কোটি টাকার প্রচারাভিযানে আমরা নিজেদের আবেগ বেচে দিতে পারিনি। আমাদের সংবাদ করার পরেই দেশের তথা রাজ্যের প্রথম সারির সংবাদ মাধ্যমগুলি নড়ে চড়ে বসে এবং আসল সত্য ও তথ্য সামনে আনতে শুরু করে। যদিও এখনো বেশ কিছু সংবাদ সংস্থা বা টেলিভিশন চ্যানেল সব কিছু জেনেও শুধুমাত্র আর্থিক ভাবে লাভবান হয়ে এই চলচ্চিত্রের নানা রকম প্রচার চালাচ্ছেন। লেখিকা কে ঘিরে একটি উন্মাদনা সৃষ্টির প্রচেষ্টা চলছে। আসলে একটা প্রবাদ বাক্য আছে – “আমরা নারী, আমরা সব পারি”। আর এই ভাবেই প্রায় এক দশক আগে নরওয়ে তে আটকে পড়া শিশু উদ্ধারের ঘটনার কৃতিত্ত্ব একেবারে নিজের একার বলেই চালিয়ে দিলেন আর ঢেকে দিলেন আসল চরিত্র টিকেই।
শুধুমাত্র লেখিকা একাই নন। প্রখ্যাত বলিউড নায়িকা রানি মুখার্জী নিজেকে আবারও দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নায়িকা প্রমান করতে গল্পের সত্যতা না জাচাই করে ( যেখানে গুগুল করলেই অনেক কিছু জানা যায়) তিনিও রাজি হলেন। আসলে সবটাই কোটি কোটি টাকার খেলা আর এর “পিছনে লুকিয়ে থাকা আর এক রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র।” এই রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র টা কি সেটা নিয়ে অন্যদিন আলোচনা করবো।
সত্য চাপা থাকে না। মায়ের কোল থেকে শিশু কেড়ে নেওয়ার ঘটনা শুনতে হয়তো বেশ পাশবিক মনে হয় কিন্তু কেন করা হয় সেটা জানলে হয়তো এতোটা পাশবিক মনে হবেনা। মা শিশুকে শাষন করলে বা, নিজ হাতে সন্তান কে খাইয়ে দেবার বা বেশী পরিমানে খাওয়ানোর কারনে নরওয়ে সরকার কোন দম্পতির কাছ থেকে সন্তান কেড়ে নেয়না। নরওয়ে সরকারের শিশু ও পরিবার কল্যান দফতরের নিয়ম জানলে আপনিও অবাকই হবেন কারন ভারতে এসব চিন্তা ভাবনা নেই। আমাদের দেশে পথে ঘাটে আমরা বহু পথশিশু বা দরিদ্র শিশুদের দেখি ভিক্ষাবৃত্তি করতে বা চায়ের দোকানে বা ভাতের হোটেলে পরিশ্রম করতে যদিও ভারতীয় আইনে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ কিন্তু তা বাস্তবায়ন আজও সম্পূর্ন হয়নি। ভারতীয় শিশুরা আজও অনেকাংশেই অনাহার ও অপুষ্টি শিকার। তারপর অর্থের অভাবে শিক্ষা সম্পূর্ন না করেই তার অবিভাবকরাই তাকে অর্থ উপার্জনের দিকে ঠেলেদেন। যা আমরা প্রতিনিয়ত দেখে আফশোষ করি কিন্তু এর বেশি কিছু করতে পারিনা। এখানেই নরওয়ে সরকারের শিশু ও পরিবার কল্যান দফতরের কাজ।
তারা কঠিন নজরদারি চালান দেশের প্রতিটি পরিবারের ওপর। হতে পারে তারা জন্মগত নরওয়েবাসী বা প্রবাসী। যেসকল দম্পতি কোন কারনে কর্মহীন, আর্থিক, মানসিক ও শারীরিক ভাবে দূর্বল এবং কোন ভাবেই তাদের সন্তান কে সাবালক হওয়া পর্যন্ত সঠিক পুষ্টি যোগ্য খাদ্য ও শিক্ষা দিতে অপারগ তাদের থেকেই সন্তান নিয়ে অন্য কোন পরিবারের হাতে সন্তান লালন পালনের দায়িত্ব দেন। যাতে শিশুটির ভবিষ্যত সুদৃঢ় হয়। স্বাভাবিক যে দেশের শিশু পর্যাপ্ত আহার ও শিক্ষা নিয়ে বড় হবে সে দেশের মেরুদণ্ড ততটাই মজবুত হবে। এখানেই ফারাক আমাদের দেশের সাথে নরওয়ের।
কিন্তু Mrs Chatterjee Vs Norway চলচ্চিত্রে এই বিষয় টিকে দেখানো হয়নি। এবার এই নিয়েই ভারত সরকার কে লিখিত চিঠিতে বিরক্তি প্রকাশ করলেন নরওয়ে সরকারের দূত হান্স যেকব। তিনি ভারত সরকার কে জানান, Mrs Chatterjee Vs Norway চলচ্চিত্রে নরওয়ে দেশের শিশু ও পরিবার কল্যান মন্ত্রকের যে মানবিক চিন্তাধারা তাকে অমানবিক বলে দেখানো হয়েছে যা নরওয়ে সরকারের ভাবমূর্তিতে আঘাত করে।
যদিও আমরা ভারতীয়রা এই নিয়ম কে মেনে নিতে পারিনা। মায়ের কোল থেকে দুগ্ধজাত শিশু কে আলাদা করা মা ও শিশু দুজনের পক্ষেই খারাপ। মানসিক ও শারীরিক ভাবে। এই মুহুর্তে নরওয়ে তে বহু বাঙালি পরিবার আছেন যাদের থেকে তাদের সন্তানদের কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই আজ আমাদের দ্যা ইন্ডিয়ান ক্রনিকেলসের সাহায্যপ্রার্থী।
নরওয়ে দুতাবাস থেকে লেখা চিঠি প্রসঙ্গে খবর টি সম্প্রচার করে দ্যা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। আপনাদের জন্য রইলো সেই লিঙ্ক।