আজ ২৮শে ফেব্রুয়ারি, দেখতে দেখতে কেটে যাবে আরো একটা মাস। আগামী মাসের অর্থাৎ ২৮শে মার্চ তখন শুধুমাত্র চারিদিকে শোনা যাবে রানি মুখার্জী ও অনির্বান ভট্টাচার্যের অভিনয়ের প্রশংসা। সিনেমা হল থেকে মাল্টিপ্লেক্স ভরে উঠবে হাততালি তে। শেষ হবে শো। পর্দা নেমে যাবে আর সবাই আবার যে যার জীবনে ফিরে যাবে। কিন্তু কেউ জানবে না এই সিনেমার পিছনে একটি পিতার বুক চাপা কান্না। জানবে না সন্তানের থেকে চিরকালের জন্য দুরে থাকা এক বাবার ব্যাকুল মনের আকুল আর্তনাদ। কেউ কি জানতে পারবে সেই সময় অরুনাভ ভট্টাচার্যের কষ্টের কথা?
অরুনাভ ভট্টাচার্য্য, Mrs Chatterjee Vs Norway সিনেমাতে রানি মুখার্জীর স্বামীর যে চরিত্রটি অনির্বান অভিনয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন, সেই চরিত্রের বাস্তবে আসল নাম হল অরুনাভ ভট্টাচার্য্য। আর Mrs Chatterjee -র বাস্তব চরিত্রের নাম হল – সাগরিকা চক্রবর্তী। কিন্তু কোথায় এখন অরুনাভ বাবু বা কোথায় তার ভাই অরুনাভাষ ভট্টাচার্য্য?
আজ এরা নিখোঁজ। কেউ জানেনা এরা কোথায়?
২০১২ সালে, নরওয়ে তে শিশু সুরক্ষা দপ্তর দ্বারা, প্রবাসী দম্পতি অরুনাভ ভট্টাচার্য্য ও সাগরিকা ভট্টাচার্য্য (চক্রবর্তী ) -র থেকে তাদের দুই শিশু সন্তান কে কেড়ে নেওয়া হয়। অভিযোগ ছিল – অরুনাভ ভট্টাচার্য্য ব্যাস্ত থাকতেন তার কর্ম জগতে আর সাগরিকা তার সন্তানদের সঠিক পরিচর্চা করতেন না। এর পরেই শিশুদুটি কে ফিরে পেতে অরুনাভ ভট্টাচার্য্য সুদুর নরওয়ে থেকে যোগাযোগ করেন কলকাতার সমাজকর্মী রাজীব সরকারের সাথে। রাজীব সরকার ও তার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আন্দোলন গড়ে তোলেন। সেই আন্দোলন রাজ্য থেকে ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেশে। কুটনৈতিক চাপে নরওয়ে সরকার শিশুদের ফেরত দিতে রাজী হয়। কিন্তু শর্তসাপেক্ষে। শিশুদের তুলে দেওয়া হবে তাদের কাকা অর্থাৎ অরুনাভাষ বাবুর হাতে এবং তারা প্রতিপালিত হবে অরুনাভ বাবুর পৈতৃক পরিবারের হাত ধরে। অরুনাভ বাবুর ভাই অরুনাভাষ ভট্টাচার্য্য শিশুদুটি কে নিয়ে ইরে আসেন কলকাতা তথা ভারতে। সেই সুত্রে কলকাতায় ফিরে আসেন অনুরুপ ভট্টাচার্যের স্ত্রী সাগরিকা ভট্টাচার্য্য (চক্রবর্তী)।
অরুনাভ বাবু থেকে গেলেন নরওয়ে তেই। কিন্তু কেন তিনি আর নিজের দেশে নিজের সন্তানের কাছে ফিরলেন না? কেমন আছেন তিনি? অনুরুপ বাবুর ভাই অরুনাভাষ বাবু কোথায় আছেন, কেমন আছেন?
অতীতে হওয়া বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবর থেকে তথা গতকার সমাজকর্মী অন্তরা সোম বসুর টেলিফোনিক সাক্ষাতকারে একটা বিষয় প্রকট হয়ে উঠেছে যে, বিবাহের পর থেকেই অনুরুপ বাবুকে তার স্ত্রী সাগরিকা চাপ দিতেন যাতে অনুরুপ বাবু তার বাবা মার সাথে না থাকেন। এবং সেই সুত্র ধরেই নরওয়ে তে যাবার পরিকল্পনা। পরবর্তীকালে সেখানেও দুজনের মধ্যে নানান কারনে অশান্তি বজায় ছিল যে কারনে শিশুদুটি এ উদ্ধার করার বিষয়ে দুজনে একসাথে কথা বলতেন না। শিশুদুটি কলকাতায় ফেরার পর, শিশুদুটিকে নিজের দখলে পেতে তিনি আইনের দারস্থ হলে, মহামান্য বিচারপতি দিপঙ্কর দত্ত সাগরিকার পক্ষে রায়দান করেন অন্যদিকা সাগরিকা, তার স্বামী অনুরুপের বিরুদ্ধে বিবাহ বিচ্ছেদ ও খোরপোষের মামলা দায়ের করেন। কিন্তু অনুরুপ বাবু ভারতে না ফেরার কারনে আজ অবধি সেই মামলার কোন নিস্পত্তি হয়নি। এমনকি সাগরিকা অনুরুপের নরওয়ের বাড়ির ও মালিকানা বা অংশীদারী চেয়েছেন। বর্তমানে তারা আলাদা থাকেন এটাই সত্য।
কিন্তু অনুরুপ বাবুর Mrs Chatterjee Vs Norway সিনেমা টি নিয়ে কি প্রতিক্রিয়া? গতকাল অন্তরা সোম বাসু তার টেলিফোনিক সাক্ষাতকারে আমাদের জানিয়েছেন, কলকাতা হাইকোর্টে সাগরিকা শিশুসন্তান দের নিজের কাছে রাখার রায় দানে, অনুরুপ বাবু প্রচন্ড ভেঙ্গে পড়েছিলেন। টেলিফোনে ঘন্টার পর ঘন্টা কেঁদেছেন, বিলাপ করেছেন নিজের সন্তান দুটির জন্য। তিনি আর কোনদিন তার শিশু সন্তান দের বুকে জড়িয়ে ধরতে পারবেন না, সারাটা জীবন তার তুলে রাখা ভিডিও দেখেই নিজেকে ভুলিয়ে রাখতে হবে।
শুধু এখানেই শেষ নয়, সমাজকর্মী অন্তরা সোম বাসুর টেলিফোনিক সাক্ষাতকারে এটাও জানা যায় যে সাগরিকা, অনুরুপ বাবুকে বিবাহের পর থেকে নানান কারনে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন যা Mrs Chatterjee Vs Norway চলচ্চিত্রে একে বারেই উল্টো দেখানো হয়েছে।
অবাক করা বিষয় হল নরওয়ে সরকারের অমানবিক অত্যাচার নিয়ে এই চলচ্চিত্র টি নরওয়ের একাধিক প্রেক্ষাগৃহে একই দিনে মুক্তি পেতে চলেছে। অনুরুপ বাবুও সেখানেই রয়েছেন। এ বিষয়ে তার প্রতিক্রিয়া যথেষ্ট মূল্যবান তাই এই কান্ডের মূল কান্ডারী সমাজকর্মী রাজীব সরকার সুদুর নরওয়েতে থাকা অনুরুপ বাবুর সাথে যোগাযোগ করেন। কিন্তু অনুরুপ বাবু জানিয়েছেন তিনি এই বিষয়ে ক্লান্ত ও বিমর্ষ। এ বিষয়ে তিনি আর নিজেকে জড়াতে চান না। আমরা যোগাযোগ করেছিলাম অনুরুপ বাবুর বাড়ির অন্য পারিবারিক সদস্যদের সাথে। তারাও এ বিষয়ে মুখ খলতে চাননি কোন এক অদৃশ্য শক্তির কারনে। কে বা কোন শক্তি সেটার ইশারাও সমাজকর্মী রাজীব সরকার ও অন্তরা সোম বাসু তাদের সাক্ষাতকারে ইশারা করেছেন।
আমরা Mrs Chatterjee Vs Norway চলচ্চিত্রের বিরোধী নই। আমরা চাই প্রকৃত সত্য সামনে আসুক। তবে যদি প্রকৃত সত্য কোন অদৃশ্য শক্তির আতঙ্কে এবারও সামনে না আসে তাহলে ভবিষ্যতে একদিন না একদিন নিরবে হলেও এই সত্য সামনে আসবেই এটাই প্রকৃতির নিয়ম ও মানব জাতির বিশ্বাস।