কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপর জঙ্গি হামলায় ২৬ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনার জবাবে মঙ্গলবার গভীর রাতে ভারত চালায় জবাবি স্ট্রাইক। অভিযানের নাম— ‘অপারেশন সিঁদুর’। পাক অধিকৃত কাশ্মীর ও পাকিস্তানের মোট ৯টি জঙ্গি ঘাঁটিতে হামলা চালানো হয় স্থল, বায়ু ও নৌ সেনার সমন্বিত অভিযানে।
বুধবার সকাল ১০:৩০ নাগাদ এক সাংবাদিক বৈঠকে ভারতীয় সেনার তরফে এই অভিযানের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। উপস্থিত ছিলেন বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী, পাশাপাশি দুই ‘অগ্নিকন্যা’—উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিংহ এবং কর্নেল সোফিয়া কুরেশি। বৈঠকের শুরুতেই দেখানো হয় অতীতের বড় জঙ্গি হামলার ভিডিও ফুটেজ— ২০০১ সালের সংসদ হামলা, ২০০৮-এর মুম্বই হামলা প্রভৃতি।
বিদেশসচিব বলেন,
“মুম্বই হামলার পর পহেলগাঁওয়ের ঘটনাই সবচেয়ে ভয়াবহ। সাধারণ মানুষকে টার্গেট করা হয়েছিল। এই হামলা কাশ্মীরের অর্থনীতি ও শান্তি ফিরিয়ে আনার চেষ্টাকে ব্যাহত করতেই হয়েছিল। ভারত তার আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করেছে।”
তিনি আরও জানান, জঙ্গি সংগঠন TRF এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। জইশ-ই-মহম্মদ, লস্কর-ই-তইবা-র মতো বড় সংগঠনই এই ছোট সংগঠনের আড়ালে থেকে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। তাই সময় নষ্ট না করে জবাব দেওয়া জরুরি ছিল।
এরপর অপারেশনের কৌশল ও লক্ষ্যমাত্রা ব্যাখ্যা করেন কর্নেল সোফিয়া ও উইং কমান্ডার ব্যোমিকা। তাঁরা জানান—
“এই ৯টি জঙ্গি ঘাঁটিকে বেছে নেওয়া হয়েছিল নির্ভুল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে। প্রতিটি ঘাঁটিকে প্রযুক্তিগত নিখুঁততায় সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা হয়েছে।”
জঙ্গি ঘাঁটির তালিকা:
- শুভান আল্লাহ মসজিদ (লস্কর ঘাঁটি)
- বিলাল মসজিদ (জইশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র)
- কোটলি মসজিদ (লস্করের বেস)
- শিয়ালকোটে মেহমুনা জোয়া ক্যাম্প (হিজবুল ক্যাম্প)
- মুরদিকের মারকাজ তইবা (২৬/১১ জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র)
সাংবাদিক বৈঠকে প্রতিটি ঘাঁটির ছবি এবং হামলার সময়ের চিত্র তুলে ধরা হয়। স্পষ্ট জানানো হয়—
“এই অপারেশনে কোনও সাধারণ নাগরিক কিংবা পাকিস্তান সেনার ঘাঁটিতে আঘাত হানা হয়নি।”
অভিযানের লক্ষ্য ছিল জঙ্গি পরিকাঠামো ধ্বংস এবং ভবিষ্যতের হুমকি রুখে দেওয়া। রাষ্ট্রপুঞ্জও পহেলগাঁওয়ের ঘটনার নিন্দা করে জানিয়েছিল, ন্যায়বিচার প্রয়োজন। ভারত সেই ন্যায়বিচারই নিশ্চিত করতে ‘অপারেশন সিঁদুর’ চালিয়েছে।