ভারতের সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশনের ষষ্ঠ দিনে বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর “অপারেশন সিন্দুর” নিয়ে বিতর্কে স্পষ্ট করে জানালেন,
“পাহালগামে আমেরিকার সঙ্গে আলোচনায় বাণিজ্য ইস্যু ছিল না।”
এই বিবৃতি দেন তিনি সেই প্রেক্ষাপটে, যেখানে সংসদে কিছু বিরোধী দল প্রশ্ন তুলেছিল যে, পাহালগামের সামরিক অভিযান চলাকালীন কোনও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আলোচনা হয়েছিল কিনা।
পাহালগামের ঘটনা ও ‘অপারেশন সিন্দুর’ বিতর্ক
২০২৫ সালের জুন মাসে পাহালগামে ভারতীয় সেনাবাহিনী পরিচালিত একটি গোপন সামরিক অভিযান — অপারেশন সিন্দুর — ঘিরে তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি হয়। এই অভিযানে সন্দেহভাজন জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সক্রিয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু বিতর্ক শুরু হয় যখন বিরোধী শিবির থেকে দাবি ওঠে যে এই সময় আমেরিকার প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ভারতের কিছু বাণিজ্য আলোচনা চলছে এবং সেই আলোচনার সময় ও স্থান নিয়ে স্বচ্ছতা নেই।
এ বিষয়ে বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর সাফ জানিয়ে দেন:
“আমেরিকার সঙ্গে পাহালগামে কোনও বাণিজ্য আলোচনা হয়নি। আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বিভিন্ন স্তরে আলোচনা হয়, কিন্তু অপারেশন চলাকালীন কোনও বাণিজ্যিক আলাপ হয়নি।”

সংসদের ভিতরে বিতর্ক ও জয়শঙ্করের জবাব
লোকসভায় বিরোধী দলগুলির প্রতিনিধিরা প্রশ্ন তোলে এই অভিযানের সময় বিদেশি মিশনের উপস্থিতি এবং তাঁদের সঙ্গে কথোপকথনের স্বচ্ছতা নিয়ে। প্রশ্ন ছিল, কেন ঠিক ওই সময়েই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়েছিল এবং এতে ভারতীয় সুরক্ষার উপর কোনও প্রভাব পড়েছে কিনা।
জয়শঙ্কর বলেন:
“বিদেশনীতি নিয়ে অহেতুক সন্দেহ তৈরি করা অনুচিত। এই অপারেশন সম্পূর্ণভাবে নিরাপত্তা সংস্থার নিয়ন্ত্রণে ছিল এবং আমেরিকার প্রতিনিধিদের সঙ্গে কোনও অপ্রয়োজনীয় তথ্য শেয়ার করা হয়নি।”
তিনি আরও বলেন,
“বিদেশ মন্ত্রক সবসময় নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করে।”
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যতের দিকনির্দেশ
এই বিতর্কের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া আসে। কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেস এই ইস্যুতে কেন্দ্রকে আরও স্বচ্ছতা প্রদর্শনের দাবি জানায়। অন্যদিকে বিজেপির নেতারা বলেন,
“এটা সম্পূর্ণভাবে একটি রাজনৈতিক বিভ্রান্তি তৈরি করার চেষ্টা।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত-আমেরিকা কূটনৈতিক সম্পর্ক আজ এতটাই সংবেদনশীল যে এমন অভিযানের সময় যোগাযোগ হলেও তা মূলত নিরাপত্তাজনিত, বাণিজ্য সংক্রান্ত নয়।
এটি প্রমাণ করে যে ভারতের বিদেশনীতি এখন কৌশলগত ভাবে আরও শক্তিশালী, এবং কোনও সামরিক অভিযানে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ থাকলেও তার অর্থ সর্বদা বাণিজ্যিক নয়।

উপসংহার: স্বচ্ছতা বনাম বিভ্রান্তির রাজনীতি
“অপারেশন সিন্দুর” বিতর্কের মধ্যে এস. জয়শঙ্করের পরিষ্কার বক্তব্য সংসদীয় বিতর্কে অনেকটা স্থিরতা এনেছে। তিনি যেভাবে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করেছেন, তা কূটনীতির পরিপক্কতা প্রকাশ করে।
এই প্রসঙ্গে একটি বিষয় স্পষ্ট—বিদেশনীতি ও সামরিক অভিযানের মধ্যে সমন্বয় থাকা জরুরি, কিন্তু তা নিয়ে রাজনৈতিক বিভ্রান্তি ছড়ানো একেবারেই অনুচিত।
📢 আপনার মতামত দিন: আপনি কি মনে করেন পাহালগামে বৈঠক হওয়া উচিত ছিল? মতামত কমেন্টে জানান এবং খবরটি বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন।