তারক হরি, বিশেষ প্রতিবেদন:
রথযাত্রা মানেই ভক্তি, উৎসব আর অপেক্ষা… রাজপথে জগন্নাথের রথ টানার সৌভাগ্য কেউ পায়, কেউ শুধু দূর থেকে প্রণাম করে। মহিষাদলের রথযাত্রা হোক বা দীঘার জগন্নাথ মন্দিরের রাজকীয় আয়োজন—সকলেই ভাগ বসাতে চায়। কিন্তু যাদের পক্ষে সেই ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায় এই উৎসব? তাদের হৃদয়ে যে কী গভীর টান থাকে, সেটা হয়তো বোঝা যায় পাঁশকুড়ার রাজশহরের ছোট্ট প্রীতি সাউ-এর হাতে।

নবম শ্রেণির ছাত্রী প্রীতি—না, কোনো রাজকন্যা নয়, কোনো শিল্পী পরিবারের মেয়ে নয়। কিন্তু তার হৃদয়ের কোণে লুকিয়ে আছে এক বিশাল জগৎ, যেখানে পুরোনো ভেসলিনের কৌটো হয়ে ওঠে জগন্নাথ, যেখানে রঙতুলির টানে মৃত বোতলে জেগে ওঠে প্রাণ।

প্রীতির ঘরে আছে সব দেবদেবীর ছবি, কিন্তু ছিল না জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার মূর্তি। সামনেই রথযাত্রা। প্রীতি জানে দীঘায় সে রথের দড়ি টানতে পারবে না। কিন্তু তার মন বলেছে, “আমিও টানব রথ, আমার গ্রামেই।”

তাই সে তৈরি করেছে নিজের রথ, নিজের জগন্নাথ। একটুখানি তুলির ছোঁয়ায়, একটা ফেলে দেওয়া ভেসলিন কৌটোতেই সে সৃষ্টি করেছে ভগবান। তার ছোট্ট হাতের কারুকাজ দেখে অবাক সবাই। একের পর এক ছোট ভাইবোন, বন্ধু, প্রতিবেশী ছুটে আসছে—“আমাকেও বানিয়ে দেবে একটা?”
কেউ হয়তো বলে, রথ টানলে পুণ্য মেলে। কিন্তু প্রীতির এই নিষ্পাপ নিষ্ঠা, এই নিঃস্বার্থ সৃষ্টি—তা যেন ঈশ্বরকেও ছুঁয়ে যায়।

প্রীতির মা বলেন,“ও ছোট থেকেই এমন জিনিস বানাতে ভালোবাসে। কেউ পুরোনো জিনিস ফেললে সেটা কুড়িয়ে এনে কী করে যেন নতুন করে সাজিয়ে ফেলে।”
প্রতিটা মানুষ স্বপ্ন দেখে—কেউ বড় হয়ে পাইলট হবে, কেউ ডাক্তার। কিন্তু প্রীতি স্বপ্ন দেখে তার তুলির ছোঁয়ায় সবার মুখে হাসি ফোটাতে।

আজ, যখন বড়রা মঞ্চে রথযাত্রার আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত, তখন এক ছোট্ট মেয়ে নিজের ছোট্ট রথ সাজিয়ে বলছে, “আমি নিজেই বানালাম আমার জগন্নাথ, আমার ভাইবোনদের নিয়ে রথ টানব, আমরা কারও থেকে কম নই।”
এই আবেগ, এই ভক্তি, এই নিষ্ঠাই রথযাত্রার সত্যিকারের আত্মা।
জয় জগন্নাথ!
এই রথে শুধু দেবতা নয়, রথে চড়ছে প্রীতির স্বপ্নও।