পিংলার পটশিল্প আন্তর্জাতিক মঞ্চে—রাষ্ট্রপতির শুভেচ্ছায় সম্মানিত আনোয়ার চিত্রকর।
তারক হরি, পশ্চিম মেদিনীপুর
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পিংলা ব্লকের নয়া গ্রাম—এই নামটির সাথেই জড়িয়ে আছে বাংলার হাজার বছরের পুরনো ঐতিহ্য, যা আজ এক নতুন পরিচিতির আলোয় উদ্ভাসিত।
যে পটচিত্র শিল্প একদিন ছিল শুধুমাত্র গ্রামীণ মেলা বা হাটের আঙিনায় সীমাবদ্ধ, আজ সেই শিল্পই পৌঁছে গেছে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে।
এই শিল্পযাত্রার অন্যতম একজন পথপ্রদর্শক হলেন পিংলার খ্যাতনামা পটশিল্পী আনোয়ার চিত্রকর। তাঁর তুলির টানে বাংলার লোকগাথা, সংস্কৃতি আর ইতিহাস নতুনভাবে প্রাণ পায়। এবার স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে, এই শিল্পী পেলেন এক বিরল সম্মান।
আসন্ন ১৫ আগস্ট, স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে একটি বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজিত হতে চলেছে,সেখানে আনোয়ার চিত্রকর তুলে ধরেন পটচিত্রের মাধ্যমে ভারতের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের এক অনন্য রূপ।
তাঁর সাথে ছিলেন আরও ১০ জন পটশিল্পী। তাঁদের সবার তুলিতে জীবন্ত হয়ে ওঠে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম, গ্রামীণ জনজীবন, মাটির সংস্কৃতি, সমাজচেতনা ও জাতীয় ঐক্যের ছবি।

শুধু শিল্প নয়, সেই চিত্রে ছিল গান, কাহিনি ও বার্তা—যা একটি পটচিত্রের পরম্পরারই অবিচ্ছেদ্য অংশ।
এই অসামান্য কীর্তির স্বীকৃতিস্বরূপ ভারতের রাষ্ট্রপতি শ্রীমতী দ্রৌপদী মুর্মু নিজ হাতে আনোয়ার চিত্রকরকে সম্মানিত করেন এবং শুভেচ্ছা জানান।
আনোয়ার চিত্রকরও রাষ্ট্রপতির হাতে তাঁর নিজ অঙ্কিত একটি বিশেষ চিত্র তুলে দেন, যা বাংলার শিল্পঐতিহ্যের ইতিহাসে একটি গর্বের মুহূর্ত।
ভালোবাসা আর গর্বের মিশেলে আবেগপূর্ণ ভাবে আনোয়ার চিত্রকর বলেন —”আমি ছোটবেলা থেকেই পট আঁকছি। এই পটচিত্র শুধু ছবি নয়, আমাদের ইতিহাস, গান, সংস্কৃতি আর আত্মপরিচয়ের বাহক। দিল্লিতে গিয়ে দেশের সামনে তা তুলে ধরতে পারাটা আমার কাছে এক বিশাল গর্ব। রাষ্ট্রপতির শুভেচ্ছা পেয়ে আমি সত্যিই আবেগে আপ্লুত। এটা আমার একার নয় — আমাদের গোটা পিংলা, নয়া গ্রামের শিল্পীদের সম্মান।”
তিনি আরও জানান, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশা মিলিয়ে প্রায় ২৮ জন শিল্পী সেই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন এবং নিজেদের নিপুণ শিল্পের মাধ্যমে সকলের মন জয় করেন।
আজ যখন প্রযুক্তির দৌড়ে লোকশিল্প প্রায় অস্তিত্ব সংকটে, তখন আনোয়ার চিত্রকরদের মতো শিল্পীরা প্রমাণ করছেন—শিকড়ের শক্তি কখনো ম্লান হয় না।
তাঁদের এই সাধনা, সংগ্রাম বাংলার সাংস্কৃতিক ভিতকে আরও দৃঢ় করছে।
একসময় যেখান থেকে যাত্রা শুরু হয়েছিল কেবল গ্রামবাংলার আঙিনা জুড়ে, সেই পটচিত্র শিল্প এখন পৌঁছে গেছে রাষ্ট্রপতি ভবনের রাজকীয় প্রেক্ষাপটে।
নয়া গ্রাম আজ শুধুই একটি গ্রাম নয়—একে বলা চলে, “পটচিত্রের পবিত্র তীর্থ”!