প্রাডা কি ভারতীয় ঐতিহ্য ‘চুরি’ করেছে?
মহারাষ্ট্রের ঐতিহ্যবাহী কোলাপুরি চপ্পলের ডিজাইন অনুকরণ করে প্রাডা তাদের সাম্প্রতিক কালেকশনে এনেছে একটি লেদার স্যান্ডাল, যার দাম প্রায় ₹১.২ লক্ষ। বিষয়টি নিয়ে শুরু হয় ব্যাপক সমালোচনা, এবং এবার সেই বিতর্ক গিয়ে ঠেকল আদালতের চৌকাঠে।

বম্বে হাই কোর্টে দায়ের হওয়া এক জনস্বার্থ মামলায় (PIL) দাবি করা হয়েছে—ভারতীয় কারিগরদের যথাযথ স্বীকৃতি ও আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য করা হোক আন্তর্জাতিক ফ্যাশন হাউস প্রাডাকে।
মামলা ও অভিযোগ:
এই PIL দায়ের করেছেন বিশিষ্ট ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি আইনজীবী গণেশ হিংমিরে। তাঁর বক্তব্য, “প্রাডা শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়ার চাপে পড়ে ডিজাইন ভারতীয় অনুপ্রেরণায় বলেছে। কিন্তু ভারত সরকারের GI রেজিস্ট্রি বা কোনও জনসাধারণের প্রতিনিধি প্রতিষ্ঠানের কাছে নয়, বরং ব্যক্তিগতভাবে এক সংস্থাকে এই স্বীকারোক্তি দিয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের নামী ব্র্যান্ডগুলি যদি আইনি বাধ্যবাধকতার মধ্যে না পড়ে, তাহলে তারা একের পর এক ভারতীয় ঐতিহ্য ও কারুশিল্প চুরি করতেই থাকবে। বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে থাকা কারিগরদের পক্ষে আইনি লড়াই চালানো অসম্ভব।”
প্রস্তাবিত প্রতিকার: পিটিশনে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে আদালতের তত্ত্বাবধানে—
- প্রাডা ও ভারতীয় কারিগর সংগঠনের মধ্যে সহযোগিতা গড়ে তোলা
- কো-ব্র্যান্ডিং, স্কিল ডেভেলপমেন্ট
- আয়ের অংশীদারিত্বের রূপরেখা তৈরি
- প্রতিটি কারিগরকে GI-ট্যাগপ্রাপ্ত নকশার জন্য স্বীকৃতি ও আর্থিক সুবিধা দেওয়া

GI ট্যাগ ও কোলাপুরি চপ্পলের মর্যাদা:
২০১৯ সালে কোলাপুরি চপ্পল GI (Geographical Indication) স্বীকৃতি পায়, যা আইনি সুরক্ষার সঙ্গে সাংস্কৃতিক গৌরবও নিশ্চিত করে। কর্ণাটকের আথানি, নিপ্পানি, বেলগাভি, বাগলকোট প্রভৃতি জেলার কারিগরেরাই এই চপ্পলের মূল নির্মাতা।
কর্ণাটকের মন্ত্রী প্রিয়াঙ্ক খাড়গে স্পষ্টভাবে বলেন, “এই চপ্পল শুধু চামড়া নয়, এটি একটি ইতিহাস ও উত্তরাধিকার। আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের কারিগরদের নাম পৌঁছানো জরুরি।”

আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ:
শুধু প্রাডা নয়, ডি’ওর (Dior)-এর বিরুদ্ধেও উঠে এসেছে ভারতের লখনউর মুখোশ কढ़াই কাজে অনুমতি ও স্বীকৃতি ছাড়া ডিজাইন ব্যবহার করার অভিযোগ। পিটিশনে আরও উল্লেখ রয়েছে, ভারতের ব্রোকেড, বান্ধনী, ব্লক প্রিন্ট, শাড়ি, শারারা—এসবও অনুকরণের শিকার।