২০ বছর পর একসঙ্গে মঞ্চে রাজ ঠাকরে ও উদ্ধব ঠাকরে— মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক আকাশে এই দৃশ্য যেন ঘনীভূত মেঘের মতোই বার্তা দিল দিল্লির দিকে। ‘হিন্দি আগ্রাসন’ রুখতে ‘আওয়াজ মরাঠিচা’ নামক জনসভায় তাঁরা একজোট হয়ে ফের বিজেপিকে দিলেন কড়া বার্তা। একইসঙ্গে উঠে এল পশ্চিমবঙ্গ এবং তামিলনাড়ুর প্রসঙ্গ।

কী বললেন রাজ ও উদ্ধব?
মুম্বইয়ের ওরলি-তে আয়োজিত জনসভায় জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০-র তিন-ভাষা নীতি নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন ঠাকরে-দ্বয়। দেবেন্দ্র ফডণবীস সরকার হিন্দিকে তৃতীয় ভাষা হিসেবে বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্তে পিছু হটতেই এই সভা। সেই প্রেক্ষাপটেই উদ্ধব ঠাকরে বলেন,
“আপনারা যদি বলপ্রয়োগ করেন, আমরাও শক্তি প্রদর্শনে বাধ্য হব। বাংলায় বা তামিলনাড়ুতেও হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে দেখুন না!”
রাজ ঠাকরেও তীব্র ভাষায় সমালোচনা করেন, বলেন, “মরাঠির প্রতি মর্যাদা থাকলে শুধু মহারাষ্ট্র নয়, গোটা ভারতে মরাঠি ভাষার প্রসার নিয়ে ভাবুন।”
)
কেন উঠে এল বাংলা?
রাজ-উদ্ধবের বক্তব্যের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের উল্লেখ ছিল কৌশলগত। কারণ এর আগেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হিন্দিকে চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে আওয়াজ তুলেছেন। সরকারি দপ্তরে, রেল বা ব্যাঙ্কে হিন্দির আধিপত্য নিয়ে বারবার কেন্দ্রকে বিঁধেছেন তিনি। এমনকি তৃণমূল কংগ্রেস বিধানসভায় প্রস্তাবও এনেছে রাজ্যে বাংলা ভাষাকে প্রাধান্য দিতে।

ভাষা নিয়ে জাতীয় রাজনীতির আবহ
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির বিরোধিতা করে একাধিক রাজ্য, বিশেষ করে দক্ষিণ ভারতে হিন্দি-বিরোধী মনোভাব জোরদার হয়েছে।
- তামিলনাড়ু: মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন স্পষ্ট বলেছেন, “এটা ভাষার আগ্রাসন নয়, সাংস্কৃতিক দখলদারিও বটে।”
- পশ্চিমবঙ্গ: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “বাংলা আমাদের পরিচয়। আমরা কারও ভাষার বিরোধিতা করছি না, কিন্তু আমাদের মাতৃভাষার উপরে অন্য ভাষাকে চাপিয়ে দেওয়া চলবে না।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষণ:
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, মহারাষ্ট্রে বিজেপির বিরোধিতা করতে গিয়ে ঠাকরে-দ্বয়ের এই সমাবেশ জাতীয় স্তরে ভাষা-ভিত্তিক বিরোধীদের একজোট হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। বাংলা, তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যগুলি যেখানে আগে থেকেই কেন্দ্রের ভাষানীতির বিরোধিতা করে এসেছে, সেখানে এই বার্তা শুধু মহারাষ্ট্র নয়, দেশের ভাষা-আন্দোলনের ভবিষ্যৎ রাজনীতিকে প্রভাবিত করতে পারে।