The Indian Chronicles | তারক হরি, বিশেষ প্রতিনিধি
ঐতিহাসিক আবিষ্কারের সামনে দাঁড়িয়ে ভারতবর্ষ! রাজস্থানের ডিগ জেলার বাহাজ গ্রামে প্রত্নতাত্ত্বিক খননে মিলল ৪,৫০০ বছরের পুরনো এক সভ্যতার চিহ্ন। আর সেই সঙ্গে প্রথমবার বৈজ্ঞানিক প্রমাণ মিলল ঋগ্বেদের পৌরাণিক সরস্বতী নদীর অস্তিত্বের!
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের ১০ তারিখ থেকে শুরু হওয়া এই প্রত্নতাত্ত্বিক খোঁড়াখুঁড়ি থেকে একের পর এক তাৎপর্যপূর্ণ আবিষ্কারে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন প্রত্নতাত্ত্বিকেরা। তারমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—২৩ মিটার গভীর এক প্রাচীন নদীখাত বা paleo-channel, যা বহুদিন ধরেই পৌরাণিক কাহিনিতে উচ্চারিত সরস্বতী নদীর সঙ্গে মিল খুঁজে পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

সরস্বতীর বৈজ্ঞানিক উপস্থিতি:
আর্কিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (ASI)-এর খনন প্রধান পবন সরস্বত জানিয়েছেন, “এই প্রাচীন নদীখাতটি প্রমাণ করে, এটি সরস্বতী উপত্যকা থেকে ব্রজ এবং মথুরা অঞ্চলের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করত। এটি কেবল একটি নদী নয়, একটি সভ্যতার উৎস ছিল।” বাহাজের এই খননস্থল সরস্বতী অববাহিকা সংস্কৃতির অন্তর্গত ছিল বলেও ধারণা করছেন গবেষকরা।
সমৃদ্ধ প্রত্নসম্পদ:
এই খননে ইতিমধ্যে উদ্ধার হয়েছে ৮০০-রও বেশি প্রত্নসামগ্রী। এর মধ্যে রয়েছে—
প্রাচীন মৃৎপাত্র
ব্রাহ্মী লিপির প্রাথমিক ছাপ
তাম্র মুদ্রা
যজ্ঞকুণ্ড
মৌর্য যুগের মূর্তি
শিব ও পার্বতীর মাটির মূর্তি
পশুর হাড় দিয়ে তৈরি সূচ, চিরুনি ও ছাঁচ
এমনকি, একটি মানব কঙ্কাল, যা বর্তমানে ডিএনএ বিশ্লেষণের জন্য পাঠানো হয়েছে ইজরায়েলে।
এই আবিষ্কার শুধু হরপ্পা-পরবর্তী সভ্যতা নয়, মহাভারত যুগ, মৌর্য, কুষাণ ও গুপ্ত যুগের সঙ্গেও সম্পর্ক স্থাপন করছে।
সবচেয়ে গভীর খনন:
২৩ মিটার গভীর পর্যন্ত হওয়া এই খনন রাজস্থানের ইতিহাসে সবচেয়ে গভীর প্রত্নতাত্ত্বিক অভিযান। এখানে পাওয়া গেছে গুপ্তযুগীয় কাদামাটির দেওয়াল, মৌর্য যুগের ‘মাদার গডেস’-এর মূর্তির অংশ, ও লোহা ও তামার ব্যবহারে তৈরি ধাতুবিদ্যার চুল্লি।

আসছে সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত:
এএসআই ইতিমধ্যেই সংস্কৃতি মন্ত্রকে রিপোর্ট জমা দিয়েছে। সম্ভাবনা রয়েছে, এই এলাকা খুব শীঘ্রই ‘জাতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক সংরক্ষিত অঞ্চল’ হিসেবে ঘোষণা পাবে।
একদিকে সরস্বতীর অস্তিত্বের বৈজ্ঞানিক প্রমাণ, অন্যদিকে হারিয়ে যাওয়া প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার ঐতিহাসিক পুনর্জন্ম—বাহাজ গ্রামের এই খনন কার্যক্রম নিঃসন্দেহে নতুন আলো ফেলেছে ভারতের অতীত ইতিহাসে।