দিঘায় এবার রথযাত্রা: সমুদ্রের ধারে মহাপ্রভুর মহোৎসব
এই প্রথমবার, পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম জনপ্রিয় সমুদ্রতট দিঘা সাক্ষী হতে চলেছে এক ঐতিহাসিক ধর্মীয় অনুষ্ঠানের— রথযাত্রা। ওড়িশার ঐতিহ্য বহন করে, দিঘার সৈকতে আয়োজিত হবে লর্ড জগন্নাথের রথযাত্রা, যা শুধুই একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং বঙ্গ-ওড়িশা মিলনের এক নতুন সাংস্কৃতিক অধ্যায়।
সমুদ্র, ভক্তি ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন
রথযাত্রা বলতেই প্রথমেই যে নামটি উঠে আসে তা হল পুরী। কিন্তু এবার সেই ঐতিহাসিক উৎসবই স্থানান্তরিত হচ্ছে দিঘার বালুকাবেলায়। স্থানীয় প্রশাসন, ওড়িশা পর্যটন দফতর এবং বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের উদ্যোগে এই আয়োজন হতে চলেছে আগামী ৭ জুলাই, ২০২৫-এ।

উৎসবটি অনুষ্ঠিত হবে নিউ দিঘার সমুদ্রসৈকতে, যেখানে তৈরি করা হবে একটি অস্থায়ী জগন্নাথ মন্দির প্রাঙ্গণ। এই অনুষ্ঠান শুধু ভক্তদের জন্য নয়, পর্যটকদের জন্যও হবে এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা। সূর্যাস্তের আলোয় সমুদ্রতট দিয়ে এগিয়ে যাবে সুসজ্জিত রথ— এক অভাবনীয় দৃশ্য।
পুরীর আদলে রথ, আচার-অনুষ্ঠান ও প্রসাদ
পুরীর রথযাত্রার অনুকরণে তিনটি রথ তৈরি হচ্ছে— জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রার জন্য। থাকবে পুরীর মতই ‘চেরাপাহারা’ অনুষ্ঠান, ভক্তদের হাতে রশি ধরে রথ টানা, আর শ্রীরাজা জগন্নাথের বিশেষ প্রসাদ বিতরণ।

৬ জুলাই হবে ‘নেত্র উৎসব’, ৭ জুলাই মূল রথযাত্রা, আর ১৫ জুলাই পালিত হবে ‘উল্টো রথ’। অনুষ্ঠানমালায় থাকছে সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ওড়িশি নৃত্য, লোকসংগীত, এবং আলোকসজ্জিত শোভাযাত্রা।
পর্যটনের নতুন দিগন্ত
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পর্যটন দফতর ও ওড়িশা সরকার যৌথভাবে এই আয়োজনকে পর্যটনের দিক থেকে সফল করে তুলতে উদ্যোগী হয়েছে। দিঘার হোটেল, লজ ও হোমস্টেগুলি ইতিমধ্যেই বুকিংয়ে ভরে উঠতে শুরু করেছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা আশাবাদী— এই রথযাত্রা দিঘার অর্থনীতিকে এক নতুন গতি দেবে।
নিরাপত্তা ও পরিবেশ সচেতনতা
প্রশাসনের তরফে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সমুদ্রতটে ভিড় নিয়ন্ত্রণে থাকবে ড্রোন নজরদারি, পর্যাপ্ত পুলিশ বাহিনী ও মেডিক্যাল ক্যাম্প। পাশাপাশি সমুদ্রের ধারে ধর্মীয় অনুষ্ঠান হলেও পরিবেশ সচেতনতা বজায় রাখতে বিশেষ প্রচার চালানো হচ্ছে।
প্রথমবারের মতো সমুদ্রের ধারে রথযাত্রা— এই অভিজ্ঞতা ভক্তদের মনে স্থায়ী হয়ে থাকবে। দিঘা এবার শুধু সমুদ্র নয়, হয়ে উঠবে ভক্তি, সংস্কৃতি ও উৎসবের মিলনক্ষেত্র। পুরীর ঐতিহ্য দিঘার বালুকাবেলায় ছড়িয়ে দেবে এক নতুন আধ্যাত্মিক স্পন্দন।