ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এখন শুধু রাজনৈতিক বা সামরিক সংঘর্ষে সীমাবদ্ধ নেই, এটি মানব সভ্যতার এক অন্ধকার অধ্যায়ে রূপ নিচ্ছে। ইউক্রেনীয় গোয়েন্দা বিভাগ (GUR) এবং আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়া তাদের সেনাবাহিনীতে এমন কিছু ব্যক্তিকে নিয়োগ করছে, যারা অতীতে মানবভক্ষণ (Cannibalism) এবং নৃশংস খুনের অভিযোগে দণ্ডপ্রাপ্ত ছিল।

📌 ঘটনার বিশদ বিবরণ
▶️ ঘটনা ১: ‘Brelok’ হত্যাকাণ্ড ও মানবভক্ষণ
ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী দাবি করেছে, রুশ বাহিনীর এক সৈন্য সহযোদ্ধা ‘Brelok’–কে হত্যা করে তার শরীরের অংশ খেয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করেছিল। এই ঘটনা খারকিভ অঞ্চলে সংঘটিত হয়। পরে উক্ত নরখাদক সৈন্যও মারা যায়।

👤 চিহ্নিত নরখাদক সৈন্যরা কারা?
🔸 ডেনিস গরিন (Denis Gorin):
- ২২ বছরের জেল হয়েছিল হত্যাকাণ্ড ও দেহভক্ষণে।
- রাশিয়ার Storm-Z ইউনিটে যুক্ত।
🔸 নিকোলাই ওগোলোবিয়াক (Nikolay Ogolobiak):
- রক্ত-আসক্ত ধর্মীয় চক্রের সদস্য।
- ছয়জনকে হত্যা করে মাংস খেয়েছিলেন বলে অভিযোগ।
🔸 দিমিত্রি মালিশেভ (Dmitry Malyshev):
- ভোলগোগ্রাদ থেকে আগত খুনী ও নরখাদক।
- বর্তমানে ইউক্রেন যুদ্ধক্ষেত্রে রুশ বাহিনীর হয়ে লড়ছে।
🍖 মানবভক্ষণ কেবল অতীত নয়, বর্তমানও
২০২৪ সালে ইউক্রেনের ভভচানস্ক শহরে রুশ সৈন্যরা খাদ্য সংকটে পড়ে কুকুর, বিড়াল এমনকি মৃত সহযোদ্ধাদের দেহও খেয়েছে—এমন দাবি করেছেন বন্দি ইউক্রেনীয় সৈন্যরা। যুদ্ধক্ষেত্রে পর্যাপ্ত রসদ না থাকায় এমন সিদ্ধান্তে যেতে বাধ্য হয় তারা।
❓ কেন রাশিয়া নরখাদকদের নিয়োগ করছে?
- যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ায় নতুন রিক্রুটমেন্ট প্রয়োজন।
- কারাগারে থাকা খুনী ও ভয়ঙ্কর অপরাধীদের মুক্ত করে সেনাবাহিনীতে নিযুক্ত করা হচ্ছে।
- Storm-Z, Wagner Group-এর মতো আধা-সরকারি ইউনিটে এদের স্থান দেওয়া হচ্ছে।
⚠️ আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ
এই তথ্য সামনে আসতেই NATO, Human Rights Watch, UN সহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি তীব্র উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ইউক্রেন এই ঘটনাগুলোকে যুদ্ধাপরাধ ও মানবাধিকারের ভয়াবহ লঙ্ঘন হিসেবে তুলে ধরেছে।
🧠 বিশ্লেষণ: মানবসভ্যতার জন্য অশনিসংকেত
নরখাদক সৈন্যদের অস্তিত্ব শুধু রাশিয়ার জন্য নয়, গোটা বিশ্বের জন্য এক অশুভ সংকেত। যুদ্ধের নামে এইরকম বর্বরতা সভ্য সমাজকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে।
রাশিয়া সেনাবাহিনীতে নরখাদক খুনিদের যুক্ত করা নিঃসন্দেহে যুদ্ধের ভয়াবহতা ও মানবিক সংকটের উদাহরণ। এই ঘটনা আরও একবার দেখিয়ে দিল, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ও যুদ্ধনীতির বলি হচ্ছে নৈতিকতা ও মানবতা।