দ্য ইন্ডিয়ান ক্রনিকলস | ২৯ জুলাই, ২০২৫
সম্প্রতি এক আইনজীবী অভিযোগ এনেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল ক্রিয়েটর সাবিত্রী দেহুড়ির বিরুদ্ধে, যিনি নানা ‘বোল্ড’ ভিডিও ও ফটো কনটেন্ট তৈরি করে জনপ্রিয় হয়েছেন। অভিযোগ, তাঁর তৈরি ভিডিও ও ছবি ভারতীয় আইনে “অশ্লীলতা”র পর্যায়ে পড়ে এবং এটি সমাজের নৈতিকতায় আঘাত করছে। এই অভিযোগ ঘিরে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে — সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যক্তির স্বাধীনতা বনাম আইনের সীমারেখা নিয়ে।

কে এই সাবিত্রী দেহুড়ি?

সাবিত্রী দেহুড়ি মূলত ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুক রিলস ভিডিওর মাধ্যমে জনপ্রিয়তা পান। তাঁর কনটেন্টে নিজস্ব পোশাকচিন্তা, নাচ ও শরীরচর্চা তুলে ধরলেও তা অনেক সময় দর্শকদের একাংশের চোখে “অতিরিক্ত সাহসী” বা “উত্তেজক” বলে বিবেচিত হয়।
আইনজীবীর অভিযোগ কী?

সূত্র অনুযায়ী, অভিযুক্ত আইনজীবী স্থানীয় থানায় সাবিত্রী দেহুড়ির ভিডিওগুলিকে “অশ্লীল” এবং “সামাজিক ব্যাধি ছড়ায়” বলে চিহ্নিত করে Indian Penal Code, Section 292 এবং Information Technology Act, Section 67-এর অধীনে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে বলা হয়, এই কনটেন্ট যুবসমাজকে বিপথে চালিত করছে এবং তা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে পড়ার কারণে তার প্রভাব গভীর।

আইন কী বলে?
ভারতীয় আইন অনুযায়ী, অশ্লীল কনটেন্ট প্রকাশ বা বিতরণ করলে তা অপরাধ হতে পারে।
👉 IPC Section 292 অনুযায়ী, এমন কিছু যা “prurient interest” জাগায় এবং যা সাধারণ মানুষের শালীনতাবোধকে আঘাত করে, তা আইনত অপরাধ।
👉 IT Act, Section 67 অনুসারে, ইলেকট্রনিক মাধ্যমে অশ্লীল কনটেন্ট শেয়ার করলে ৩ বছর পর্যন্ত জেল ও জরিমানার বিধান রয়েছে।
তবে এর ব্যতিক্রমও আছে। যদি কনটেন্টটি শিল্পমূলক উদ্দেশ্যে তৈরি হয়, বা তাতে সামাজিক বার্তা থাকে, তাহলে সেটি অশ্লীল হলেও আইনের চোখে অপরাধ নয় — একাধিক সুপ্রিম কোর্টের রায়েও সেই দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হয়েছে।
তবে সিনেমায় যা চলে, সোশ্যাল মিডিয়ায় তা কেন নয়?
চলচ্চিত্র বা ওয়েব সিরিজ সাধারণত CBFC (সেন্সর বোর্ড) দ্বারা যাচাই করা হয় এবং তাদের প্রেক্ষাপট, বার্তা ও শ্রেণিবিন্যাস থাকে। অন্যদিকে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও বানিয়ে নিজে আপলোড করলে তা নিরীক্ষাহীনভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং অনেক সময় বয়সভিত্তিক সীমাবদ্ধতা মানা হয় না। তাছাড়া, এটি বাণিজ্যিক ক্লিক বা মনোযোগ পাওয়ার উদ্দেশ্যে তৈরি হলে আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে তা আলাদা গুরুত্ব পায়।
সাবিত্রী কী বলছেন?
“আমি যা করি, তা নিজের শরীর ও মনের স্বাধীনতা থেকে করি। কাওকে কষ্ট দেওয়ার উদ্দেশ্য আমার নেই।”
সামাজিক প্রতিক্রিয়া বিভাজিত
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সমাজে মতবিরোধ তুঙ্গে। একাংশ মনে করছেন, সাবিত্রীর মত মানুষেরা নিজেদের দেহ ও জীবনকে যেভাবে ইচ্ছা উপস্থাপন করতে পারেন, সেটাই আধুনিক সমাজের মূল চেতনা। অন্যদিকে, আরেক পক্ষ মনে করছেন, এই ধরনের কনটেন্ট সমাজে অস্থিরতা ও নৈতিক অবক্ষয় ঘটায়।
স্বাধীনতা না সীমা?
এই বিতর্ক শুধু সাবিত্রী দেহুড়িকে ঘিরেই নয়, বরং গোটা ডিজিটাল সমাজের সামনে এক কঠিন প্রশ্ন তুলে ধরেছে — ব্যক্তি স্বাধীনতা কতটা, আর সমাজের সীমা কোথায়? আইনের ব্যাখ্যা নির্ভর করে প্রেক্ষাপট, উদ্দেশ্য এবং প্রভাবের উপর। তাই এ ধরনের মামলায় আদালতের রায়ই ভবিষ্যতের দিশা দেখাবে।
- প্রতিবেদক, দ্য ইন্ডিয়ান ক্রনিকলস
(আপনি চাইলে নিচে “মতামত জানান” বা “এই সংক্রান্ত আপনার অভিজ্ঞতা লিখুন” )