কলকাতা, ৩০ মে, ২০২৫ –
বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থায় এক দ্বৈত বাস্তবতা সামনে এসেছে। একদিকে, অভিভাবকরা নিজেদের সাধ্যের বাইরে গিয়ে সন্তানদের বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ভর্তি করাচ্ছেন। অন্যদিকে, সরকারি স্কুলগুলির ছাত্র সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে এবং একাধিক বিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার মুখে। এমন এক প্রেক্ষাপটে, রাজ্যের বেকার যুবকদের শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে চলমান আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
বাংলার শিক্ষা বাস্তবতা: সরকারি স্কুলে ছাত্র নেই, ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪ লক্ষ কমে যায়। একাধিক রিপোর্টে উঠে এসেছে, অন্তত ৮,২০০টির বেশি সরকারি স্কুলে ছাত্র সংখ্যা বিপজ্জনকভাবে কম। অনেক বিদ্যালয়ে হয় মাত্র ১০-১৫ জন ছাত্র, নয়তো একেবারেই শূন্য!
এদিকে, অভিভাবকদের একটি বড় অংশ মনে করছেন, সরকারি স্কুলে মানসম্মত শিক্ষা ও ইংরেজি ভাষার অভাব রয়েছে। ফলে তারা মাসে ২০০০-৫০০০ টাকা খরচ করে বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে সন্তানকে পাঠাতে বাধ্য হচ্ছেন।
তাহলে শিক্ষক নিয়োগের দাবি কতটা যুক্তিসঙ্গত?

সরকারি স্কুলে যদি ছাত্রই না থাকে, তাহলে সেখানে শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে আন্দোলন কেন? এই প্রশ্ন অনেকেই তুলছেন।
তবে আন্দোলনকারীরা বলছেন—
“আমরা যোগ্য পরীক্ষার্থীরা। রাজ্য সরকার যদি সরকারি স্কুলের মান উন্নয়ন করে, ছাত্র সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়, তাহলেই এই শিক্ষকরা দরকার পড়বে।”
তাদের মতে, সরকারি চাকরির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও অনেকে বছরের পর বছর নিয়োগের অপেক্ষায়, আবার কেউ কেউ 2016 সালের SSC দুর্নীতির শিকার হয়ে চাকরি হারিয়েছেন।
তাদের প্রশ্ন: “সরকার যদি স্কুল বন্ধ করে দেয়, তাহলে একদিন সরকারি শিক্ষক পদেরই তো অস্তিত্ব থাকবে না। সেটাই কি চায় সরকার?”
রাজ্যের পদক্ষেপ কী?

২০২৫ সালে রাজ্য সরকার ঘোষণা করেছে, ৩৫,৭২৬টি শিক্ষক পদের জন্য নতুন নিয়োগ শুরু হবে। এ ছাড়া, নিয়োগে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে ওএমআর শিট, কার্বন কপি ও সাক্ষাৎকারের ভিডিও রেকর্ড রাখার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।
তবে যারা চাকরি হারিয়েছেন, তারা কি আবার পরীক্ষা দেবেন, না সরাসরি পুনর্বহাল হবেন – এই বিষয়ে সরকার এখনও স্পষ্ট নয়।
সমাধান কোথায়?
পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থা আজ এক মোড়ে দাঁড়িয়ে – যেখানে একদিকে সরকারি স্কুলের অস্তিত্ব সংকটে, অন্যদিকে শিক্ষিত বেকারেরা লড়ছেন স্বপ্নের শিক্ষকতার চাকরির জন্য।
রাজ্যের উচিত এই সংকট মোকাবিলায়:
- সরকারি স্কুলের পরিকাঠামো উন্নয়ন,
- ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষা প্রবর্তন,
- নিয়োগে স্বচ্ছতা ও দ্রুততা বজায় রাখা,
- এবং ছাত্র টানতে সরকারি স্কুলে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া।