নয় মাসের দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস) থেকে সফলভাবে পৃথিবীতে ফিরেছেন নাসার দুই মহাকাশচারী সুনীতা উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোর। তাঁদের এই প্রত্যাবর্তন মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

মহাকাশ মিশনের সময়সীমা ও চ্যালেঞ্জ
২০২৪ সালের ৫ জুন, সুনীতা এবং বুচ আইএসএস-এর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। মূলত আট দিনের মিশন পরিকল্পনা থাকলেও, প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে তাঁদের মহাকাশে অবস্থান দীর্ঘায়িত হয়ে নয় মাসে পরিণত হয়। বোয়িংয়ের স্টারলাইনার মহাকাশযানের প্রপালশন সিস্টেমে গোলযোগ এবং হিলিয়াম লিকের কারণে তাঁদের প্রত্যাবর্তন বারবার বিলম্বিত হয়।
স্পেসএক্স ড্রাগন ক্যাপসুলে প্রত্যাবর্তন
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর, ইলন মাস্কের সংস্থা স্পেসএক্সের ড্রাগন ক্যাপসুলের মাধ্যমে তাঁদের পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। স্থানীয় সময় অনুযায়ী মঙ্গলবার বিকেল ৫:৫৭ মিনিটে (ভারতীয় সময় বুধবার ভোর ৩:৩০ মিনিটে), ফ্লোরিডা উপকূলে ক্যাপসুলটি নিরাপদে অবতরণ করে। অবতরণের পর, সুনীতা এবং বুচকে প্রাথমিক চিকিৎসা ও পরীক্ষার জন্য নাসার জনসন স্পেস সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়।

পৃথিবীতে ফেরার পর শারীরিক অভিযোজন
দীর্ঘ সময় মহাকাশে শূন্য মাধ্যাকর্ষণে থাকার কারণে, নভশ্চরদের শরীরে বিভিন্ন প্রভাব পড়ে। হাড় ও পেশির ক্ষয়, দৃষ্টিশক্তির সমস্যা, এবং ভারসাম্য বজায় রাখতে অসুবিধা হতে পারে। এ কারণে, পৃথিবীতে ফেরার পর তাঁদের বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। প্রথম ধাপে, শরীরে নমনীয়তা ও পেশিশক্তি পুনরুদ্ধারের উপর জোর দেওয়া হয়। পরবর্তী ধাপে, বিশেষ ব্যায়াম ও বিনোদনমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে তাঁদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলতে থাকে।

পরিবারের সঙ্গে পুনর্মিলন
নয় মাস মহাকাশে কাটানোর পর, সুনীতা উইলিয়ামস তাঁর পরিবারের সঙ্গে পুনর্মিলনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। বিশেষ করে, তাঁর দুই পোষ্য কুকুরের সঙ্গে সময় কাটানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন তিনি। নাসার জনসন স্পেস সেন্টারে শারীরিক পরীক্ষানিরীক্ষা ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরই তিনি পরিবারের কাছে ফিরতে পারবেন।
সুনীতা উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোরের এই সফল প্রত্যাবর্তন মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। তাঁদের অধ্যবসায় ও সাহসিকতা ভবিষ্যতের মহাকাশ মিশনগুলোর জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।